• ভিলেন তাপমাত্রার ওঠা–নামা, ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের ওয়ার্ডে
    এই সময় | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: শীত তো আছেই। তার চেয়েও বেশি করে আছে তাপমাত্রার লাগাতার ওঠা-নামা। আর তার জেরেই যেমন ঘরে ঘরে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশি, তেমনই হাসপাতালেও থিকথিক করছে রোগীর ভিড়। শীতের এই মরশুমে শ্বাসনালীর নানা সংক্রমণে ভোগা রোগীর ভিড়ই মূলত উপচে পড়ছে। আক্রান্তরা মূলত বয়স্ক ও শিশু। নানা ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার হামলায় ঘায়েল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তারা। এর মধ্যে যেমন রয়েছে করোনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা, তেমনই রয়েছে অ্যাডিনো, রাইনো ও রেসপিরেটরি সিন্সিটিয়াল ভাইরাস।

    চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, সামান্য হাঁচি-কাশিই বয়স্কদের অনেকের ক্ষেত্রে তিন-চার দিনের মধ্যে ভয়াবহ শ্বাসকষ্টে বদলে যাচ্ছে। আর সে জন্যই হাসপাতালে বাড়ছে বয়স্ক রোগীর ভিড়। পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, শ্বাসনালীর নানা সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যাটা তাঁদের হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৪৬।

    স্বাভাবিক কারণেই এই ঠান্ডায় হার্ট অ্যাটাকের রোগীও এখন বেশি ভর্তি রয়েছে। সল্টলেকের টেকনো ইন্ডিয়া ডামা হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার মহম্মদ শাহনওয়াজ পুরকাইত বলেন, ‘ইন্ডোর-আউটডোর, দু’ জায়গাতেই অন্তত ১০% রোগী বেড়ে গিয়েছে। মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে অসুস্থ হয়েছেন এঁরা। বড়দের শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ফুসফুসে প্রদাহ, শুকনো কাশি ও অ্যাজ়মা এবং ছোটদের ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়া বেশি দেখা যাচ্ছে।’

    বিপি পোদ্দার হাসপাতালের গ্রুপ অ্যাডভাইজ়ার সুপ্রিয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় কোনও দিনই হাসপাতালে কোনও বেড খালি থাকছে না। ৬০% রোগীই আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে। মূলত ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজি়জ় (সিওপিডি), ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন, যার মধ্যে অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ।

    মেডিকা সুপার-স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও গত দু’ সপ্তাহে শ্বাসনালীর সংক্রমণে ভোগা রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন সেখানকার মেডিসিন ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘অন্তত ৩০ জন রেসপিরেটরি পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে গত কয়েক দিনে। ছোটদেরও মরশুমি ফ্লুয়ের সংক্রমণ হচ্ছে দেদার। তবে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে চলেছে। গত কয়েক বছরে এত রোগী ভর্তি হননি এই মরশুমে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স্কদের ইমিউনিটি কমে যায় এবং শিশুদের ইমিউনিটি এখনও পরিণত নয় বলেই তারা বেশি ভোগে এই ধরনের সংক্রমণে।

    আনন্দপুর ফর্টিসের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জয়দীপ ঘোষের অভিজ্ঞতা বলছে, ‘সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বেশ খানিকটা বেড়ে গিয়েছে এই মরসুমে। বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে আবার মূত্রনালীর সংক্রমণও মাথাচাড়া দিয়েছে এই শীতে। রোজ এই সব সংক্রমণের ৭-৮ জন রোগী দেখছি আউটডোরে, যার মধ্যে ৩-৪ জনকে ভর্তি করতেই হচ্ছে।’

    ওই হাসপাতালেরই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমিতা সাহা আবার বলছেন, ‘প্রতিদিন ১০-১২ জন সর্দি-কাশি-জ্বরের শিশুরোগী দেখছি। অধিকাংশ ১ বছরের কম বয়সিরা আরএসভি, নিউমোনিয়া আর হাম নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। আর তার চেয়ে বেশি বয়সি শিশুরা ব্যাকটেরিয়াল ও ভাইরাল নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।’ তিনি জানাচ্ছেন, আক্রান্তদের ৩০-৪০% রোগীকে ভর্তি করতে হচ্ছে।

    দমদম আইএলএস হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ পিনাকী দে জানাচ্ছেন, প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, মামুলি ভাইরাল সংক্রমণ পরে সেকেন্ডারি ইনফেকশনে বদলে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার জন্ম দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলছে। এমন রোগীর সংখ্যাই এখন বেশি দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে।

  • Link to this news (এই সময়)