বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি
ওরা পড়াশোনা করে, আবার তার ফাঁকে কৃষিকাজও করে। ওদের কারো বয়স আট বছর, কারো নয় বা ১০। এই চাষাবাদের ফসল ওরা নিজেদেরই কাজে লাগায়। ওরা ময়নাগুড়ির বাগজান আদর্শ প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রী।
পোশাকি ভাষায় যাকে বলে হয় কিচেন গার্ডেন। ফি বছর এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা মরশুমি আনাজের চাষ করে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় থাকেন তত্ত্বাবধানে। শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালে।
তখন থেকেই এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের জমিতে বিভিন্ন আনাজ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়। তারপর থেকে এখনও অবধি এই স্কুলে পঠনপাঠনের পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা আনাজ চাষ করে। কচিকাঁচাদের হাতের যত্নে বেড়ে ওঠে বিভিন্ন রকমারি আনাজ। যেমন, গরম কালে ঢেঁড়স বা পুঁইশাক। শীতকালে বাঁধাকপি, ব্রকোলি, লঙ্কা, বেগুন, মূলো, বিনস ইত্যাদি। এই আনাজ বাগান থেকে তুলে মিড–ডে–মিলে রান্না হয়। প্রতিদিন আলাদা আলাদা তরকারি রান্না করা হয়।
এ বছরও কিচেন গার্ডেন সবুজ হয়ে উঠেছে। শীতের মরশুমি গাছে কচি পাতা ধরেছে, কোনওটায় এসেছে ফুল। আগে যদিও স্কুলের তরফে এই চাষ শুরু করা হয়েছিল, এখন এই বিষয়টি পাঠ্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে চাষাবাদের বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি কৃষি দপ্তরের এগ্রিকালচার টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (আতমা)–র পক্ষ থেকে স্কুলে চাষের জন্য আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চাষে আগ্রহ বেড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের, আগ্রহ বাড়ছে কচিকাঁচাদেরও।
এই স্কুলের আনাজ চাষে সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করা হয় বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক। শুধু আনাজ নয়, আছে ফলমূলও। স্কুলের জমিতে পেয়ারা ও কুল বাগান রয়েছে। এই বাগানগুলিও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তৈরি। পড়াশোনার পাশাপাশি চাষাবাদ করে ছেলেমেয়েরা খুশি। ওদের কাছে বিষয়টি যেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসের মতো। ২০১৮ সালে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উৎপাদিত আনাজ জল্পেশ মেলায় সরকারি স্টলে প্রদর্শিত হয়েছিল।
মূলত শিশুদের পঠনপাঠনের পাশাপাশি বাড়তি কিছু কাজ শেখানোর উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রীতা অধিকারী, চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জ্যোতি রায়, পঞ্চম শ্রেণির যিশু রায় বলে, ‘পড়াশোনার ফাঁকে এই কাজটা বেশ ভালো লাগে। হেড মাস্টারমশাই চাষাবাদে সাহায্য করেন। তাই আরও বেশি ভালো লাগে। তখন আর স্যরকে ভয় লাগে না।’