সিবিআই যেন সঠিক ভাবে তদন্ত চালায়, আরজি কর কাণ্ডে এই দাবি জানিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। আরজি করের তদন্ত প্রক্রিয়া যাতে কলকাতা হাই কোর্টের নজরদারিতে হয়, সেই জন্যেও শীর্ষ আদালতের কাছে আবেদন জানাবেন নিহত চিকিৎসকের পরিবার। আজ কিংবা আগামিকালই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাটি দায়ের করা হবে। শীর্ষ আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের হয়ে এই মামলাটি লড়বেন আইনজীবী করুণা নন্দী।
এই নিয়ে নির্যাতিতার বাবা বলেন, 'আমরা নতুন করে তদন্ত চাইছি না, বরং আরও তদন্ত চাইছি। এই ঘটনায় আরও কেউ রয়েছেন। তাঁদের খুঁজে বার করা হোক। আর সিবিআই তদন্ত প্রক্রিয়া হাই কোর্টের তত্ত্বাবধানে ঘটলে সেই শুনানিতে আমরাও থাকতে পারব। সেই ক্ষেত্রে তদন্তে অসঙ্গতি বা ফাঁক থাকছে মনে হলে আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে সেটা জানাতে পারব।' উল্লেখ্য, সিবিআই নিশ্চিত যে আরজি কর কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ই একমাত্র দোষী। এই আবহে ধৃতের 'ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট' বা মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। মামলার ফাইনাল সাবমিশনে সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজার আর্জি জানায় সিবিআই। এদিকে সেই রায়ের আগেই শীর্ষ আদালতে নির্যাতিতার বাবা-মা।
উল্লেখ্য, এর আগে সিবিআই তদন্তের তত্ত্বাবধানের আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থাঙ্কর ঘোষের এজলাসে মামলা করেছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সেই সময় বিচারপতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে এই তদন্ত হচ্ছে এবং হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি বিচারাধীন, তাই সিঙ্গল বেঞ্চের তরফ থেকে এই মামলায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। তবে সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি যদি অনুমোদন দেন কিংবা তদন্ত প্রক্রিয়ার নজরদারি সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেন, তাহলে তিনি এই মামলায় তত্ত্বাবধান করতে পারেন। এই আবহে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন নির্যাতিতার বাবা-মা।
এদিকে সম্প্রতি শিয়ালদা আদালতে নিজেদের বক্তব্য পেশ করেছেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা। ৫৭ পৃষ্ঠার একটি বয়ান জমা দেন। তাঁরা দাবি করেছেন, সঞ্জয় একা নয়, মেয়েদের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার আরও কয়েকজন যুক্ত রয়েছে বলে মনে করছেন। একজনের পক্ষে এরকম কাজ করা সম্ভব নয় বলে সওয়াল করেছেন তাঁরা। সেইসঙ্গে তাঁরা দাবি করেছেন, যারা যারা ওই ঘটনায় যুক্ত আছে, তাদের খুঁজে বের করতে আরও তদন্ত করা হোক। সেইমতো যাতে চার্জশিট পেশ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা-মা।
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে সম্প্রতি সিএফএসএল-এর একটি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছিল যাতে দাবি করা হয়েছিল, নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে কোনও বীর্য মেলেনি। তবে সেখানে যে ডিএনএ মিলেছে, তা একাধিক ব্যক্তির মিশ্রিত ডিএনএ হতে পারে। আবার অপর এক রিপোর্টে দাবি করা হল, নির্যাতিতার যোনিদ্বারে যে ডিএনএ মিলেছে, তাতে এক মহিলার ডিএনএ উপস্থিত আছে। টিভি৯ বাংলার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, নির্যাতিতার যোনিদ্বার থেকে মেলা ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, D12S391 মার্কারে অন্য মহিলার সঙ্গে নির্যাতিতার নমুনার মিশ্রণ স্পষ্ট। সেই অন্য মহিলার জেনোটাইপ হল 16/22।
জানা যায়, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ২৯টি ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণ কর হয়েছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি বা সিএফএসএলের রিপোর্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে নাকি বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, নির্যাতিতার বৃহৎ অন্ত্রের শেষ ভাগ, স্তনবৃন্ত, যোনিদ্বারে ডিএনএ নমুনায় 'গোলমেলে ইঙ্গিত' রয়েছে। দাবি করা হয়েছে, নির্যাতিতার বৃহৎ অন্ত্র সহ বেশ কিছু অঙ্গ থেকে যে ডিএনএ-র নমুনা মিলেছে, তা এক নারীর। তবে সেই নমুনার কয়েকটি মার্কারে ইঙ্গিত মিলেছে যে সেই ডিএনএ নির্যাতিতার নয়। তা সঞ্জয়েরও নয়। এই আবহে প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে অন্য এক মহিলার ডিএনএ এল নির্যাতিতার দেহে? এদিকে রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, স্তনবৃন্ত থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনার বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, তার সাথে সঞ্জয়ের ডিএনএ মিলে যাচ্ছে। তবে ৪টি অটোসোমাল মার্কার বিশ্লেষণে নাকি অন্য পুরুষেরও ডিএনএ থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। এই আবহে ফের আরজি কর কাণ্ডে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এই আবহে আরজি কর মামলায় সিবিআই ফাইনাল সাবমিশনে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবি জানায়।