রূপক মজুমদার, বর্ধমান
এলাকায় ভাড়াটের সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেলেও তার কোনও তথ্য থাকছে না বর্ধমান থানার কাছে। জিটি রোড এবং ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া নবাবহাট ও উল্লাস মোড়ের উপনগরীতে কয়েক মাসের মধ্যে প্রচুর বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ‘এই সময়’–এ প্রকাশিত গত ২৫ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেক বেশি টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়েছে একাধিক বাড়ি।
অথচ থানায় এ সব ভাড়াটের কোনও তথ্যই জমা পড়েনি। বাড়ির মালিকদের এই প্রবণতা রুখতে এ বার কোমর বেঁধে নামল পুলিশ। ভাড়াটেদের তথ্য পুলিশকে জানাতে মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকে প্রচারের কর্মসূচি শুরু করা হলো বর্ধমান থানার তরফে। বাড়িতে ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও ভাড়াটের বিস্তারিত নথি থানায় জমা না দেওয়া হলে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিন টোটোয় মাইক বেঁধে প্রচার চালায় বর্ধমান থানা। জানানো হয়, বাড়ি ভাড়া দিলে ভাড়াটের বিস্তারিত নথি থানায় জমা করতে হবে। প্রচারগাড়ি থেকে একটি আবেদনপত্র বা ফর্মও বিলি করা হয়েছে। তাতে বাড়ির মালিক বর্ধমান থানার আইসি-কে লিখিত ভাবে জানাচ্ছেন, তিনি কোন এলাকায় থাকেন, তাঁর বাড়িতে কতদিন ধরে কে ভাড়া থাকছেন, ভাড়াটের পরিবারে কতজন সদস্য, সেই পরিবারের কর্তা কী কাজ করেন ইত্যাদি। ওই আবেদনপত্রের সঙ্গে থানায় জমা দিতে হবে ভাড়াটের স্ব–প্রত্যয়িত আধার বা ভোটার কার্ড বা যে কোনও সরকারি পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
বর্ধমান থানা থেকে এ রকম সচেতনতা প্রচার আগেও করা হয়েছিল। বিশেষ করে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর। জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার ভাড়াটেদের তথ্য বাধ্যতামূলক ভাবে থানায় জানানোর ব্যাপারে নির্দেশ জারি করেছিলেন। তাতে সিলমোহর দিয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু সেই নির্দেশ থেকে যায় স্রেফ খাতায়–কলমে। মানেননি কেউই। সে সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন— নিজের বাড়িতে ভাড়া দিলে তার তথ্য কেন জমা দিতে যাব? খাগড়াগড়ের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ১০ বছর। কিন্তু তার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে ভাড়াটের কোনও ডেটাবেসই থানায় নেই।
ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পুলিশ অপেক্ষা করবে। কিন্তু তার পরেও যদি কারও বাড়িতে ভাড়াটে থাকা সত্ত্বেও সে তথ্য পুলিশের কাছে না জানানো হয়, তা হলে সেই বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। তথ্য গোপন করা সমেত বেশ কিছু ধারায় মামলা করা হবে। কত টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে তা তো আর পুলিশ জানতে চাইছে না। ভাড়াটের তথ্য চাইছে। যাতে পরবর্তী সময়ে কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়।’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘মানুষকে বুঝতে হবে, পরিস্থিতি এখন অনেকটা বদলে গিয়েছে। বাংলাদেশে পালাবদলের পর সক্রিয় হয়ে উঠছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। এখন আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
ভাড়াটের তথ্য জানাতে বাড়ির মালিকদের এত অনীহা কেন? বেশ কয়েকজন বাড়ির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বাড়ি ভাড়া দেওয়া হলে পুরকর বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই তথ্য গোপনের এই প্রবণতা। এ প্রসঙ্গে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, ‘ভাড়া দিলে রাজ্য সরকারের ঠিক করে দেওয়া ভ্যালুয়েশন অ্যাক্ট অনুযায়ী বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায় করে পুরসভা। সেটা খুবই সামান্য। তাও দিতে অনীহা? অথচ সেই ভাড়াটেকেও কিন্তু পরিষেবা দেয় পুরসভা।’