• টাকা খরচ করেও টরেন্টোয় বোরোলি পাওয়ার উপায় নেই
    এই সময় | ০৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • ডাক্তার অতনু নন্দী, টরেন্টো

    শরৎকাল এলেই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কানাডার টরেন্টোতে থাকলেও মন পড়ে থাকে এ দেশে, কোচবিহারে। বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপুজো বলে কথা। এরপর রাস মেলা। সেই সময়েও ছোটবেলার দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু উপায় নেই। ছেলেমেয়ে, স্ত্রী এবং নিজেও এখন কানাডার নাগরিক। নাই নাই করে দু’টো দশক কাটিয়ে দিলাম ওখানে।

    আর কোচবিহার জেনকিন্স স্কুলের সেই ছোটবেলার বন্ধুদের সান্নিধ্য বড্ড মিস করি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই সব সুখের স্মৃতি নিজের অজান্তেই রোমন্থন করতে ইচ্ছে করে। রাতে খেতে বসে, বা শোওয়ার সময়ে নিজের অজান্তেই হেসে উঠি সেই সব দুষ্টুমির কথা ভেবে। ডাক্তার অতনু নন্দী থেকে বন্ধুদের সেই অতনু হতে ইচ্ছে করে।

    ১৯৭৪ সালে কোচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হই এমবিবিএস পড়তে। আর তখনই কোচবিহার শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদিরাম সরণির বাড়ি থেকে দূরত্ব তৈরি হওয়া শুরু। পড়াশোনার তাগিতেই সেই দূরত্ব এখন নিয়ে চলে গেছে প্রবাসে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পড়া শেষ করে করে ম্যাঙ্গালোর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই। সেখানে মাইক্রো বায়োলজিতে এমডি করি।

    এরপর পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল বায়োলজি করেছি। তারপর ম্যাঙ্গালোর ও মণিপালে প্র্যাকটিস করেছি প্রায় ৯ বছর। ২০০৫ সালে চলে আসি টরেন্টোয়। এখানেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত চিকিৎসক হিসাবে চাকরি করেছি। এখন অবশ্য অবসর সময়ে দু’তিনটে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের পড়াচ্ছি। ছেলেমেয়েরাও তাঁদের নিজ কর্মস্থলে রয়েছে। তবে এত কিছুর মাঝেও মন কিন্তু পড়ে রয়েছে সেই কোচবিহারে।

    দু’এক বছর বাদে কোচবিহারে যাই। আর সেখানে গেলে ফিরে আসার সময় কষ্ট হয়। নাড়ির টান ছিঁড়ে আসতে চোখে জল আসে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব সকলকে ছেড়ে চলে আসতে হয় এই দূর দেশে। কোচবিহারের বোরোলি মাছ আমার খুবই প্রিয়। টাকা খরচ করেও কানাডায় তা পাওয়ার উপায় নেই। তাই বাড়ি ফিরলে বোরোলি চাই–ই–চাই। তবে কোচবিহারটা যেন আর আগের মতো নেই। চারিদিকে এত গাড়ি–টোটো পায়ে হেঁটে রাস্তায় চলা যায় না। আগে এমনটা ছিল না। গোটা কোচবিহার হেঁটে ঘুরতাম। সে সব এখন অতীত। তার সঙ্গে শহরের দূষণ এখন অনেকটাই বেশি বলে মনে হয়।

    অনুলিখন––চাঁদ কুমার বড়াল কোচবিহার

  • Link to this news (এই সময়)