ছাত্র সপ্তাহ পালনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ছোটবেলায় ফিরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনে করলেন, কষ্ট করে পড়াশুনোর সেই দিনগুলির কথা। তাঁর কথায়,'ছোটবেলায় বাবা মারা গিয়েছিল। অনেক কষ্ট করে পড়াশুনো করেছি। অনেক বাধা অতিক্রম করেছি। সংসারের হালও ধরেছিলাম'। এমনকি সিপিএম জমানায় পরিচয় লুকিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে হয়েছে বলেও জানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। সেই ব্যাখ্যা নিজেই একাধিকবার দিয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন,'অনেকে আমাকে বড় বলে ওকে (দাদা) ছোট বলে। সবাই আমার জন্মদিন, জন্মদিন করে... আমি মনে করি, আমি এখনও জন্মাইনি। আমার একটা কবিতা আছে, জন্ম হবে সেদিন, এই পৃথিবী থেকে বিদায় নেব যেদিন। আসলে আমরা সবাই হোম ডেলিভারি। আমি যখন ছোট্ট ছিলাম, নামও নিজে দিইনি, পদবীও নিজে দিইনি'।
তিনি যোগ করেন,'হ্যাপি বার্থডে দিনটা আমার পছন্দের নয়। ওটা সার্টিফিকেটের বয়স। আমি জানতামও না। আমি যখন কলেজে পড়ি, দাদা আমাকে একদিন বলল, তুই কি জানিস বাবা কী করে তোর বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে! সার্টিফিকেটে তোর আর আমার মধ্যে বয়সের ফারাক ৬ মাস। আমি বললাম দারুণ। জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে বয়সটা দিল? ও বলল, বাবা গেল স্কুলে। বন্ধু হেডমাস্টারকে বলল, তুমি একটা বসিয়ে দাও'।
তখনকার দিনে জন্মতারিখ মনে রাখার চল ছিল না বলে মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন,'যাঁরা বাড়িতে জন্মেছি, হোম ডেলিভারি, তাঁদের এই সমস্যা ছিল। আসল বয়সটা লুকিয়ে থাকে। সার্টিফিকেটের নকল বয়সটা মানুষ ধরে ফেলে। ও সামনে আছে বলে সাক্ষী রেখে বলতে পারি, আমার ৫ বছর বয়স বাড়ানো আছে। আমার নামটাও পছন্দ নয়। অনেকদিন আগে একান্ত বইতে লিখেছি, যতটা লেখা সম্ভব। এগুলি ছোটবেলার ঘটনা'।
রাজনীতি করার কারণে লুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়েছিল বলেও জানান মমতা। তাঁর মন্তব্য,' আজও আমার মনে আছে স্কুল শিক্ষিকাদের নাম মনে আছে। মনে আছে কলেজের দিনগুলিও। শিক্ষায়তনে বিএড পড়েছি, তাঁদের কথাও মনে আছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ খুব কম গিয়েছি। সেই সময়টা রাজনীতি করতাম। ভয়ে ভয়ে যেতাম। কারণ আমি জীবন্ত লাশের মতো। মা থেকে মাথা পর্যন্ত এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে সিপিএম আমলে মার খেয়েছি। মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। সেই সময়টা ক্লাসে যেতে ভয় পেতাম। তা সত্ত্বেও দুবছরের এমএ-তে একবছর লুকিয়ে ক্লাস করেছি। আমার পরিচয় কেউ জানতে পারেনি। এলএলবি করার সময়েও পরিচয় জানতে পারেনি কেউ'।