সন্দেশখালি গণধর্ষণ অভিযোগের পুলিশ তদন্ত নিয়ে রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্য সরকারের থেকে এই রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত আপাতত নির্যাতিতার বাড়িতে নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যের আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই চার্জশিট দাখিল করা হবে।' রাজ্যও রিপোর্ট দাখিলের জন্য সময় চায়। আগামী সোমবার রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সন্দেশখালির এক মহিলা গতকাল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত বছরের মে মাসে স্থানীয় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দিলীপ মল্লিক-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করেন। অভিযোগ, গত বছর মে মাসে তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবল মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করেছিলেন তাঁকে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। পুলিশ এফআইআর দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। গণধর্ষণ মামলার তদন্তে পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তোলেন ওই মহিলা। মহিলার আরও অভিযোগ, অভিযুক্তরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সব জেনেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না। হাইকোর্টে তিনি উপযুক্ত তদন্তের আবেদন জানান তিনি। মঙ্গলবার তাঁকে মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
বুধবার মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, আপাতত নির্যাতিতার বাড়িতে পুলিশ নিরাপত্তা দেবে। দুই পুলিশ কর্মী মোতায়েন থাকবেন। তাঁদের মধ্যে একজনকে সশস্ত্র পুলিশ হতে হবে। এছাড়াও এই মহিলার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কী তদন্ত করেছে, তা রিপোর্টের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি। সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন এই রিপোর্ট জমা দিতে হবে রাজ্যকে।
গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান ঘিরে গোলমালের ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। জোর করে জমি দখল, মহিলাদের উপর অত্যাচার, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই তেতে ছিল সন্দেশখালি। গ্রেফতার করা হয় উত্তম, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহকে। পরে জামিন পান বিকাশ। গ্রেফতার করা হয় শিবপ্রসাদকেও। গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকেও। গ্রেফতার করা হয় শাহজাহানকেও। সন্দেশখালির ঘটনা ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। এমনকী, ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে সন্দেশখালি অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল। সন্দেশখালিকে হাতিয়ার করে নির্বাচনী যুদ্ধে শামিল হয়েছিল বিজেপি-সহ বিরোধীরা। বসিরহাট লোকসভা কন্দ্রের অন্তর্গত সন্দেশখালি। বসিরহাটে পদ্ম প্রতীকে লড়েছিলেন রেখা পাত্র। যদিও হেরে যান তিনি। জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল।