রবি থেকে বুধ—চার দিনে বারবার এই জঙ্গল, ওই জঙ্গল করে-বেড়ানো বাঘের পায়ের ছাপেই লুকিয়ে রয়েছে আপাত নিশ্চয়তার আশ্বাস। ঘরের ছেলে ঘরে, থুড়ি, জঙ্গলের বাঘ জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। নিশ্চিন্ত, নিরাপদ এ বার লোকালয়। ৫ জানুয়ারি, রবিবার রাতে কুলতলি ব্লকের মৈপীঠ-বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্তপল্লিতে ঢুকে পড়া বাঘটিকে সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকালে ওরিয়ান নালা সাঁতরে গ্রাম লাগোয়া ম্যানগ্রোভের ঝোপে দেখতে পান স্থানীয় মৎস্যজীবী জয়দেব জানা। সেখানে দিনভর জাল খাটিয়ে শীতের রাতে নদী বাঁধে পাহারা দিয়েছিল বন দপ্তর। কিন্তু মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকালে দেখা যায়, বাঘটি আজমলমারি ১১-র জঙ্গলে ফেরত না গিয়ে আবার বন দপ্তরের টাঙানো জাল টপকে বেরিয়ে গিয়ে ঘাঁটি গেড়েছে শ্রীকান্তপল্লির পাশের ৬ নম্বর উত্তর বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে। সেখানকার ঝোপঝাড়ে বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ খতিয়ে দেখা শুরু করেন বনকর্মীরা। চিন্তা বাড়ে। তবে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে বন দপ্তরের আধিকারিকরা পাগমার্ক দেখে নিশ্চিত হন, বাঘটি জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। DFO নিশা গোস্বামী বলেন, ‘বাঘ জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। পাগমার্ক দেখেই আমরা বুঝতে পেরেছি। সেটাও আমরা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয়েছি।’ কী এই পাগমার্ক? কী ভাবেই বা বোঝা যায় কোনটি বাঘের আর কোনটি বাঘিনির পায়ের ছাপ? খোঁজ নিল এই সময় অনলাইন।
বারবার লোকালয়ে বাঘ আসার কী কারণ? (সুন্দরবনের ক্ষেত্রে)
খাবারের সন্ধানেই লোকালয়ে চলে আসছে বাঘ।
শীতকালে নদীর জলস্তর কম থাকে; তাই সহজেই নদী পারাপার করতে পারে বাঘ।
গভীর জঙ্গলের অনেক জায়গাতেই দুর্বল ফেন্সিং, আবার অনেক জায়গায় চোরাশিকারীরা ফেন্সিং কেটে দিয়েছে।
শীতকালে বেশী কুয়াশা হয়, যে কারণে বাঘ অনেক সময় গভীর জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে?
জঙ্গলে খাবারের ঘাটতি নেই বলে দাবি বন দপ্তরের।
ফেন্সিং রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
নদীপথে পেট্রলিং বাড়ানো, যাতে বাঘ লোকালয় আসতে না পারে।
তবে গ্রামবাসীরা গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে ফেন্সিং দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলেই জানিয়েছেন DFO। গভীর জঙ্গলে ফেন্সিং দেওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
জঙ্গলের সমীকরণ বলছে, ২০১৮ সালে যেখানে সুন্দরবনের বাঘের ঘনত্ব (টাইগার ডেনসিটি) প্রতি ১০০ বর্গ কিমিতে ছিল ৩.৬, সেখানে ২০২২-এ তা বেড়ে হয়েছে ৪.২৭। অর্থাৎ বাঘ বেড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এ দিকে বিজ্ঞানীদের হিসাবে সুন্দরবনের ক্যারিং ক্যাপাসিটি (প্রতি ১০০ বর্গ কিমিতে বাঘের সর্বোচ্চ সংখ্যা) ৪.৬৮। ফলে অঙ্ক বলছে, ভারতের হাতে থাকা সুন্দরবনের জঙ্গল আর কয়েক বছরেই তার ধারণ ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে যাবে।
তথ্য সহায়তা: শিলাদিত্য সাহা