HMPV কি আদৌ ‘আতঙ্কের নতুন নাম’? হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের সংক্রমণের জেরে আবার কি মানুষকে গৃহবন্দি হতে হবে? ফের লকডাউন? প্রশ্ন তৈরি হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। ‘এই সময় অনলাইন’-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনই বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দিলেন মহামারী বিশেষজ্ঞ পর্ণালী ধর চৌধুরী।
চিনের হাসপাতালের কিছু ভিডিয়ো মোবাইলে ঘোরাফেরা শুরু করতেই তৈরি হয় আশঙ্কা। সেটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় শেষ দু’দিনে (রবি ও সোমবার)। জানা যায়, ভারতে HMPV-র অস্তিত্ব মিলেছে কয়েকজনের শরীরে। তার মধ্যে রয়েছে তিন মাসের এক শিশুকন্যা, আট মাসের এক শিশুপুত্র। তা হলে কি ভারতে ঢুকে পড়ল এই ভাইরাস?
পর্ণালী বলেন, ‘HMPV ভাইরাস একটি রেসপিরেটরি ভাইরাস যা কি না ইনফ্লুয়েঞ্জা, RSV-র মতোই কমন এবং এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় শীতকাল ও বসন্তের শুরুতে। বিশেষত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। ভারতেও এই ভাইরাস আগে থেকেই ছিল। কিন্তু যেহেতু রেসপিরেটরি ডিজ়িজ়-এর উপসর্গ দেখা গেলেই এর টেস্ট করা আবশ্যিক ছিল না, তাই নতুন করে ঢুকে পড়ল এ কথা বলা যায় না।’
এই ভাইরাসকে কেন্দ্র করে সত্যিই কি আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনও বিষয় আছে? তাঁর কথায়, ‘এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এটা নতুন কোনও ভাইরাস নয়। এদের জেনেটিক স্ট্রাকচার আমাদের জানা। গবেষণায় ১৯৫০ সাল থেকেই এর অস্তিত্ব মিলেছে। এমনকী ভাইরাসের ফাইলোজেনেটিক অ্যানালিসিসে দেখা গিয়েছে, এর সমগোত্রীয় ভাইরাস পাখিদের মধ্যে (এভিয়ান) ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে ছিল।’
এই ভাইরাস থেকে কি কোভিডের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে? ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘একেবারেই না। কোভিড যখন এসেছিল তখন করোনা ভাইরাস ছিল নভেল করোনা ভাইরাস, অর্থাৎ যার স্ট্রেন বা জেনেটিক স্ট্রাকচার পৃথিবীর কাছে অজানা ছিল। অন্যদিকে HMP ভাইরাসের জেনেটিক স্ট্রাকচার আমাদের জানা এবং রিসার্চ বলছে, এটি RSV ভাইরাসের মতোই কম ক্ষতিকারক।’
যদিও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে উঠে আসছে চিনের কথা। যে চিন থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছিল, ভারতের সেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকেই ফের আরও এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু বলে জানাচ্ছেন অনেকে। পর্ণালী বলেন, ‘আসলে চিন এই কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে দেরিতে রিপোর্ট করেছিল। কোভিড অতিমারীর পরে হু-র সার্ভিলেন্স-এর কারণে সমস্ত রেসপিরেটরি ডিজি়জ়-এর টেস্ট বেশি মাত্রায় হচ্ছে। ফলে HMPV-র রিপোর্টও বেশি হচ্ছে।’ চিনের যেটা করা উচিত, পজিটিভ রিপোর্ট দেখে HMPV-র নতুন কোনও স্ট্রেন মিলছে কি না, তার রিপোর্ট তৈরি করা এবং বিশ্বের সকলকে সেই বিষয়ে জানানো।
তাঁর দাবি, HMPV-র দুটি (A ও B) স্ট্রেন রয়েছে। আমেরিকা, জাপান, ব্রিটেনে, ফ্রান্স, স্পেন, তাইওয়ানে এই ভাইরাস ঘটিত রোগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ভাইরাসের নতুন কোনও স্ট্রেন পাওয়া যায়নি। তাই এই HMPV সংক্রমণ নিয়ে বা কতজন সংক্রমিত হলেন, সেই সংখ্যা নিয়েও অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
সাক্ষাৎকার : অনির্বাণ ঘোষ