• অবৈধভাবে টোটো তৈরি বন্ধ করা হবে, জানালেন পরিবহন মন্ত্রী  
    আজকাল | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • মিল্টন সেন, হুগলি:‌ বন্ধ করে দেওয়া হবে অবৈধ টোটো তৈরির সোর্স। গোটা বিষয়টাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে। জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। বেআইনিভাবে টোটো তৈরি নিয়ে শুরু থেকেই সরব রাজ্যের ই–রিকশা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি। তাঁদের দাবি, অবৈধভাবে তৈরি করা টোটো তাঁদের ব্যবসার ক্ষতি করছে। ফলে তাঁদের ব্যবসা ভিনরাজ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৈরি হয়েছে একাধিক ই–রিকশা তৈরির কারখানা। কারখানাগুলিতে প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে দেশি প্রযুক্তিতে হাজার হাজার ই–রিকশা। কর্মসংস্থানও হয়েছে বহু শ্রমিকের। তবে একদা ই–রিকশার চেসিস থেকে নাট বল্টু, ব্যাটারি সবই আসত চীন থেকে। আমদানি করা সামগ্রী এ্যাসেম্বল করে এই ব্যবসা শুরু হয়েছিল রাজ্যে। সেক্ষেত্রে খুব বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হত না। এখনও সেই পদ্ধতিতে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু কোম্পানি। রাজ্যের ই–রিকশা উৎপাদনকারীদের মধ্যে তাঁদের নাম থাকলেও তাঁরা এখনও চীন নির্ভর। তবে বর্তমানে রাজ্যে বড় কোম্পানি তাঁদের কারখানায় ই–রিকশা তৈরির ক্ষেত্রে কোনও চীনা সামগ্রী ব্যবহার করে না। গাড়ির চেসিস ওয়ারিং, মোটর, ব্যাটারি থেকে শুরু করে নাট বল্টু, বসার আসন, লাইট সবই তৈরি হয় তাঁদের কারখানায়। ব্যবহার করা হয় দেশি কোম্পানির তৈরি ব্যাটারি। ইতিমধ্যেই কোটি কোটি টাকা এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। দৈনিক সেই সমস্ত কারখানা থেকে বেরোচ্ছে হাজার হাজার ই–রিকশা। তবে তৈরি হওয়া সেই ই–রিকশার অধিকাংশই বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ভিন রাজ্যে। একাধিক প্রস্তুতকারক সংস্থা তাঁদের তৈরি ই–রিকশা বিদেশে পাঠাচ্ছেন। 

    হাওড়া জেলার ই–রিকশা কোম্পানির কর্ণধার সৌরভ দামানি জানিয়েছেন, অবৈধ টোটোতে বাজার ছেয়ে গেছে। অবৈধভাবে টোটো তৈরি করে তা কম দামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে সরকারের পাশাপাশি তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ওদের কোনও রকম ট্যাক্স ইন্সুরেন্স কিছুই লাগছে না। যাত্রীদের ক্ষেত্রেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। কিন্তু বৈধ ভাবে সরকার অনুমোদিত এই ব্যবসা করতে গিয়ে নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রধান সমস্যা ই–রিকশা রেজিস্ট্রেশন। কোনও জেলার রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার (আরটিও) ডিলারের ট্রেড সার্টিফিকেট অর্থাৎ (টিসি) আটকে রাখছেন। অধিকাংশ জেলায় রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না। কোনও জেলায় আবার দালালদের দাপট এতটাই যে ওদের ছাড়া রেজিস্ট্রেশন দূরের কথা টিসি পাওয়াই দুষ্কর। ফলে ব্যবসা সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় গিয়ে পরিবহন আধিকারিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত দরবার করা তাঁদের কাছে সম্ভব হয়ে উঠছে না। নানান কারণে এরাজ্যে বিক্রি অনেকটাই কম। তবে দেশের অন্যান্য রাজ্যে এই সমস্ত সমস্যা নেই। তাই বর্তমানে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাঁরা অন্যান্য রাজ্যের বাজারের দিকে নজর দিয়েছেন। শুধু তাঁরা নন, একই রাস্তায় চলছে রাজ্যের সমস্ত ই–রিকশা প্রস্তুতকারক সংস্থা। এই প্রসঙ্গে বেঙ্গল ইলেকট্রিক ভেহিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শেখ নাসিরউদ্দিন জানিয়েছেন, লিখিতভাবে সমস্যার বিষয় জানানো হয়েছে রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রীকে। তিনি যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। সম্প্রতি রাজ্য পরিবহন দপ্তরের তরফে সমস্ত জেলার পরিবহন দপ্তরে রেজিস্ট্রেশন চালু করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি রাস্তায় চলা টোটোগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছেন, টোটো চালিয়ে গরিব মানুষের সংসার চলে। তাই সেগুলিকে বন্ধ করার কোনও চিন্তা ভাবনা সরকারের নেই। তবে টোটো নিয়ে একটা পলিসি তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পরিবহন দপ্তরের আইটি বিভাগ সেটা নিয়ে কাজও শুরু করেছে। পুরোনো টোটোকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। টোটোতে কিউআর কোড সহ স্টিকার মারা হবে। যেসমস্ত অবৈধ সোর্স ব্যবহার করে টোটো তৈরি হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লেদ কারখানা বা গ্যারাজে, যেখানে অবৈধ টোটো তৈরি হয় সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। অবৈধ টোটো তৈরি বন্ধ হলে প্রকৃত স্টিকার মারা টোটো রাস্তায় চলছে তার একটা হিসেব পাওয়া যাবে। তারপরে পরিবহন দপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা বৈঠক করে উপলব্ধ টোটো কোথায় কিভাবে চালানো যায় ঠিক করা হবে। অবৈধ টোটো তৈরি বন্ধ হলেই সমস্ত বিষয় একটা নিয়মের মধ্যে আসবে।
  • Link to this news (আজকাল)