• বাংলা ও অসমে হামলার ছক ছিল এবিটি জঙ্গিদের
    বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • অভিষেক পাল, বহরমপুর: নতুন প্রজন্মের প্রচুর সংখ্যক কিশোর, যুবককে আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর সঙ্গে যুক্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল জঙ্গিরা। সেই উদ্দেশ্যেই মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় ‘দাওয়াত’ দিচ্ছিল তারা। সেই দাওয়াতের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল, নতুন জঙ্গিদের রিক্রুটমেন্ট ও তাদের পরিচালনার দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া। সেখানে তাদের সন্ত্রাসবাদ কার্যকলাপ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলত। জেহাদি কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাপক অনুপ্রেরণা দিত শীর্ষ জঙ্গি নেতারা। নতুন বছরেই মুর্শিদাবাদ জেলার একটি এলাকায় নতুন এক সদস্যের বাড়িতে এই দাওয়াতের আয়োজন করা হচ্ছিল। ওই প্রভাবশালী সদস্যর কাঁধেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল গোটা আয়োজনের। সেখানে এবিটি প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানির ঘনিষ্ঠ দু-একজনের আসার কথাও ছিল। ওই সভায় নতুন সদস্যদের সামনে সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পাশাপশি বাংলা ও অসমের কোন কোন এলাকায় নাশকতা ঘটানো হবে, তার ব্লু-প্রিন্ট চূড়ান্ত করার কথা ছিল। 


    মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিপুল সংখ্যক যুবকদের জেহাদি ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করে তোলার লক্ষ্যে এগচ্ছিল মহম্মদ শাদ রবি ও আব্বাস আলিরা। বহরমপুরের জেল থেকে সংগঠনের হাল হকিকত নিয়ে খোঁজ রাখত জেএমবি তারিকুল ইসলামও। অসম এসটিএফের হাতে ধৃত শাদের কাছে এই তথ্য জানার পর তদন্তকারীরা গোটা জেলায় নতুন সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ শুরু করেছেন। সীমান্তবর্তী জেলায় এবিটির নেটওয়ার্ক যে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে, তা ভালই বুঝতে পারছেন তদন্তকারীরা। জেলার ২৬টি ব্লকে এই সংগঠনের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে বলেই আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। 


    অসম এসটিএফের এক আধিকারিক বলেন, নতুন সদস্যদের জন্য আয়োজন করা দাওয়াতে তারা জেহাদি প্রচার চালাত। এইসব দাওয়াত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকেও শীর্ষ জঙ্গি নেতারা আসত। তাদের থাকা খাওয়ার জন্য প্রতিটি জায়গায় এলাহি বন্দোবস্ত করা হতো জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে। নতুন সদস্যদের কাজে লাগিয়ে নানা কায়দায় টাকা আদায় করত সংগঠনের মাথারা। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থে সংগঠন মজবুত করার কাজ করছিল এবিটির এ রাজ্যে মাথারা। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বিভিন্ন খারিজি মাদ্রাসা তৈরি করে সেখানে বালক-বালিকাদের এনে ভারতবিদ্বেষী মনোভাব গড়ে তোলা ছিল প্রধান লক্ষ্য। তারপর সুযোগ বুঝে সেখানে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো বলেই জেনেছেন গোয়েন্দারা। নতুন প্রজন্মের ছেলে ছোকরাদের যাতে এইসব মাদ্রাসায় আনতে কোনও বেগ পেতে না হয়, সেজন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করত এবিটি সদস্যরা। হরিহরপাড়ার বারুইপাড়া মোড়ে আব্বাসের খারিজি মাদ্রাসায় একইভাবে নতুন মুখদের আনা হয়েছিল। কিছুটা দূরে বহরান গ্রামের বাসিন্দা মিনারুল শেখকে জঙ্গি যোগে গ্রেপ্তার করে অসম এসটিএফ। তাকেও জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এলাকায় সাধারণ মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ত মিনারুল। সে পাম্প ও বিভিন্ন মেশিন সারাইয়ের কাজ করত। গ্রামের কোনও চাষির ট্রাক্টর ও ধান ঝাড়াইয়ের মেশিন খারাপ হলেই ডাক পড়ত তার। পারিশ্রমিক না নিয়ে  সে গ্রামের মানুষের কাজ করে দিত। ফলে, খুব সহজেই মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল মিনারুল। হরিহরপাড়ার আরও একটি জায়গায় খারিজি মাদ্রাসা তৈরির জন্য জমি দেখাও শুরু করেছিল সে। জমি কিনে মাদ্রাসা তৈরির পরিকল্পনা ছিল তার।   কিন্তু তার আগেই এসটিএফের জালে ধরা পড়ে সে।  
  • Link to this news (বর্তমান)