টুসু পরবের খরচ জোটাতে ঝাড়গ্রাম শহরে কাজের খোঁজে আদিবাসী জনতা
বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম: হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তারপর টুসু পরবে মেতে উঠবে ঝাড়গ্রাম সহ গোটা জঙ্গলমহল। এই পরবে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে নতুন কাপড়, পিঠেপুলি ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবছর টুসু পরবের খরচ জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। কেন না বিজেপি চালিত কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকেরই চাষযোগ্য জমিটুকুও নেই। এদের অনেকেরই দিনমজুর ও ১০০ দিনের কাজের কাজে সংসার চলতো। এর আগে চাষের কাজে অন্যের জমিতে কামিন মুনিসের কাজ করে টুসু পরবের খরচ জোগাড় হতো। সম্প্রতিকালে হাতির তাণ্ডবের হাত থেকে পাকা ধান রক্ষার জন্য ধান কাটা মেশিন ব্যবহার করে তড়িঘড়ি ধান সংগ্রহ করেছে চাষিরা। ফলে অনেকেই চাষের কাজও হারিয়েছে।
এতবড় পরবের খরচ জোগাড়ে এখন সাতসকালেই ঝাড়গ্রাম শহর এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের লোকজন। রেলের বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কেবল পোঁতার জন্য মাটি খোঁড়ার কাজ, বড় বড় আবাসন নির্মাণের বিভিন্ন ঠিকাদারদের অধীন কাজ করে এঁরা পরবের খরচ জোগাড় করছেন। হাতির ভয় উপেক্ষা করে অনেক দিনমজুর ১০-১২ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ঝাড়গ্রামে হাজির হচ্ছেন। জামবনী এলাকার দিনমজুররা একসঙ্গে পিকআপ ভ্যান ভাড়া করে রোজ সকালে ঝাড়গ্রাম শহরে কাজে আসছেন। এই সমস্ত দিনমজুররা এই পরিস্থিতির জন্য বিজেপি চালিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপর দায় চাপাচ্ছে। তাঁরা অনেকেই বলছেন, এলাকায় ১০০ দিনের কাজ চালু থাকলে তাদের এই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে আসতে হতো না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের উদ্যোগে রেশনে বিনামূল্যে চাল ও আটা দেওয়া হচ্ছে। তা যদি না হতো তবে, এই খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে পড়তো।
এই নিয়ে শিরশি গ্রামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা অনেকেই দল বেঁধে ঝাড়গ্রাম কাজে যাই, কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ শ্রমিকের কাজ করি। সারা মাস কাজ মেলে না। দু’-একদিন কাজ না পেয়ে ফিরেও আসতে হয়। এই কয়েকটা দিন কেউ কামাই করতে চাইছে না। কেন না সবাই টুসু পরবের খরচ জোগাড় করছে। ১০০ দিনের কাজ বন্ধের জন্য আমাদের এই অসুবিধা হয়েছে।
এই নিয়ে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলেন, কেন্দ্র সরকার এ রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষদের বঞ্চনা করেছে। তারা মানুষের পরব পার্বণ এ সমস্ত নিয়ে কিছু ভাবে না। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০০ দিনের কাজের বিকল্প কাজ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আবাস যোজনার বাড়িও দেবেন। এই নিয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত রায় বলেন, ১০০ দিনের কাজ বন্ধের ফলে গোটা রাজ্যের শ্রমিক, দিনমজুরদের অসুবিধা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর জন্য মূলত দায়ী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কেন্দ্র সরকারকে এই প্রকল্পের টাকার হিসেব দেননি। তিনি নিজের মতো করে সবকিছু চালাচ্ছেন। ফলে এ রাজ্যের নিচুতলার গরিব মানুষের দুর্দশা আগামী দিন আরোও বাড়বে।