কোটি টাকা খরচে তৈরি কাশীপুরের পাহাড়পুর পর্যটনকেন্দ্র যেন ধ্বংসস্তূপ
বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কাশীপুর: জেলার পর্যটন মানচিত্রে কাশীপুরের পাহাড়পুরকে তুলে ধরতে একাধিক প্রকল্প নিয়েছিল প্রশাসন। সৌন্দর্যায়নে খরচও হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা। কিন্তু, স্রেফ প্রশাসনিক উদাসীনতায় মাত্র তিন বছরেই ধ্বংস হতে বসেছে পর্যটনকেন্দ্রটি। দায় এড়িয়ে প্রশাসনের অবশ্য যুক্তি, সেভাবে পর্যটক আসে না। তাই এই হাল। তাহলে প্রশ্ন উঠছে, একথা কি আগে থাকতে জানা ছিল না প্রশাসনিক আধিকারিকদের? জেনে বুঝেও এরকম একটি জায়গায় কোটি টাকা খরচ হল কেন?
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০২০-’২১ সালে পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের বড়রা অঞ্চলের পাহাড়পুর পাহাড়ের কাছে পর্যটনকেন্দ্র তৈরিতে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় পাহাড়ের কাছেই ছোট একটি ডুংরিকে সাজিয়ে তোলা হয়। পর্যটকদের চা-ভাজাভুজি খাবারের ব্যবস্থায় খোলা হয় ‘চা-অবকাশ’। পাশেই বাচ্চাদের খেলাধুলোর জন্য একটি দোলনা, স্লিপার বসানো হয়। তাতেই খরচ হয় ৭৬ লক্ষ টাকা! শুধু তাই নয়, ধাপে ধাপে এলাকায় একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। পাহাড়তলিতে একটি জলাশয় রয়েছে। সেখানে স্নানাগার নির্মাণের পাশাপাশি বোটিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়। মনোরম এই জায়গাকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে যা যা করার সবকিছুই করে প্রশাসন। পরিকল্পনা ছিল কটেজ তৈরিরও। তবে, বর্তমানে সব টাকাই জলে!
‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের আওতায় পর্যটককেন্দ্র বিকাশের পিছনে প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল, এলাকার মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করা। তাই এসবের পাশাপাশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে জলাশয়ে মাছ চাষ, হাঁস চাষ থেকে শুরু করে আশেপাশের পতিত জমিতে সব্জি চাষেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু, ‘স্বনির্ভর’ হওয়া তো দূর, স্থানীয় মহিলাদের স্থানীয় একটি ক্র্যাশারে ঝুঁকি নিয়ে পাথর ভাঙার কাজ করতে যেতে হয়। তেমনই কথা হচ্ছিল কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলছিলেন, শুরুর দিকে ভালোই পর্যটক আসছিল। বিক্রিবাটাও হচ্ছিল। কিন্তু, কয়েক মাস চলার পরই পর্যটন কেন্দ্রের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্রের খবর, ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যটন কেন্দ্রটির উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন তত্কালীন জেলাশাসক, তত্কালীন জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া, বিডিও সুপ্রিম দাস প্রমুখ। প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, কাশীপুর এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্রের ঘাটতি ছিল। সেই আক্ষেপ ঘুচল। এরফলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাও ব্যাপক উপকৃত হবেন। কিন্তু, কোথায় কী! আক্ষেপ কি আদৌ ঘুচল কাশীপুরবাসীর? আদৌ কি উপকৃত হলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা?
এনিয়ে কাশীপুরের বিডিও অবশ্য বলেন, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা। মহিলাদের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রাখতে গেলে তো কিছু না কিছু কাজ দিতে হবে। কিন্তু, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।