সংবাদদাতা, বহরমপুর: বহরমপুর শহরের সুভাষ সরোবরের (লালদিঘি পার্ক) অর্ধেকের বেশি ঢেকে গিয়েছে কচুরিপানায়। যে হারে কচুরিপানার আগ্রাসন বাড়ছে তাতে আগামী দু’ সপ্তাহের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী সুভাষ সরোবরের জল আর দেখা যাবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। সরোবর ও পার্ক তাদের কৌলিন্য হারানোয় মুখ ফেরাচ্ছেন পর্যটকরা।
বহরমপুর পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে বিনোদন পার্ক। তবে জলাভূমি ও পার্কের দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রতিদিন ১ হাজার ৯০০ টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়। মাছ চাষের জন্য জলাভূমি লিজ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তার সংস্কারে হাত দেওয়া হবে।
বহরমপুরে ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্ট তৈরির সময়ে মাটি কেটে ওই এলাকা ভরাট করা হয়। মাটি কাটার ফলে তৈরি হয়েছিল সুভাষ সরোবর। যা লালদিঘি পার্ক হিসেবেই অধিক পরিচিত। ১৫ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে জলাভূমি ও পার্ক। পার্কের এক পাড়ে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনিক ভবন। অন্য পাড়ে বহরমপুর পুরসভা ভবন ও প্রচুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহ। একসময়ে সুভাষ সরোবরে বোটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। পার্কের পশ্চিম পাড়ে চলত ট্রয় ট্রেন। এখন সেসব অতীত। বহরমপুর পুরসভা পার্কের সৌন্দর্যায়নের চেষ্টা করেছে বটে কিন্তু তা পর্যটকদের মন কাড়তে পারেনি। বসার বেঞ্চ ছাড়া বিনোদনের খোরাক অমিল। সুভাষ সরোবর কচুরিপানায় মুখ ঢাকায় পর্যটকরাও মুখ ফেরাচ্ছেন। পুরসভার দাবি, পার্ক থেকে দৈনিক গড় আয় হয় ৩ হাজার টাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য প্রতিদিন সাতজন শ্রমিককে ৪ হাজার ৯০০ টাকা দিতে হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন দু’ হাজার টাকা ভর্তুকি গুনতে হয়।
জলাভূমিটি বাৎসরিক তিন লক্ষ টাকায় এক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে লিজ দেওয়া হয়েছে। প্রচুর মাছ উৎপাদন হয় এই সরোবরে। সরোবরে বিশাল আকারের মাছ দেখতে একসময় ভিড় উপচে পড়ত। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সরোবরে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির দাবি, বিষক্রয়ায় ৪০ কুইন্টাল মাছের মৃত্যু হয়। পনেরো লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তারপর থেকে জলাশয়ের হাল খারাপ হতে শুরু করে। সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে কচুরিপানা অর্ধেকের বেশি জলাশয় ঘিরে ফেলেছে। সরোবর মাছ চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সংস্কার না হলে পরের বার লিজ নিতেও কেউ এগিয়ে আসবে না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভার। আয়ের উৎস এবং শহরের ঐতিহ্য ফেরাতে তারা নড়েচড়ে বসেছে। পর্যটকদের বিনোদনের খোরাক জোগাতে সুভাষ সরোবর সংস্কারে হাত লাগাবে পুরসভা।
গোরাবাজারের বাসিন্দা নির্মল কর্মকার বলেন, সুভাষ সরোবর এই শহরের ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব পুরসভার। আমরা চাই লালদিঘি পার্ক সাজানো হোক।