সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রেলের জায়গায় ব্যবসা করতে হলে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হবে। অভিযোগ, রামপুরহাট আরপিএফের এমন অলিখিত ফতোয়া মানতে রাজি হয়নি ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। শিক্ষা দিতে বুধবার সকালে প্রচুর ফোর্স নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে আসে আরপিএফ। যদিও ফুটপাত ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে পাল্টা প্রতিবাদ মিছিলের মাধ্যমে আরপিএফের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে অবশেষে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রেখে পিছু হটে আরপিএফ। তবে মাসিক টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রামপুরহাট আরপিএফ ইন্সপেক্টর হংসরাজ মিনা।
রামপুরহাট শহরে রেলের সীমানা পাঁচিল ঘেঁষে প্রায় সাড়ে তিনশো জন ফুটপাত ব্যবসায়ী রয়েছেন। যাঁদের আয়ের উপর সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা সবই চলে। মাস সাতেক আগে রেল জেসিবি দিয়ে সেই সমস্ত স্থায়ী অস্থায়ী দোকানপাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। যদিও পরবর্তী সময়ে নিত্যদিন পসরা নিয়ে যাওয়া আসা করে ব্যবসা করতে থাকেন তাঁরা। শীতের এই সময় শিশির থেকে বাঁচতে তাঁরা চারটি খুঁটি পুঁতে ত্রিপল টাঙায়। ফুটপাত ব্যবসায়ী টোকন শেখ বলেন, দিন কয়েক আগে আরপিএফ এসে বলে উপরমহল থেকে চাপ আছে। কয়েকদিনের জন্য জায়গা খালি করে দিন। বুধবার থেকে দোকান লাগাবেন। শীতের এই সময় বিক্রিবাট্টার মরশুম। বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি চলছে। আমাদের ক্ষতি জেনেও আরপিফের কথামতো আমরা সরে যাই। কিন্তু প্রতিশ্রুতি মতো আমরা এদিন দোকান লাগালে আরপিএফ সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে আসে।
এরপরই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে প্রতিবাদে নামেন। তাঁরা আরপিএফের সামনে দিয়ে বিশাল মিছিল নিয়ে যান। পরে আরপিএফের সামনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টোকন বলেন, আরপিএফের জুলুম ও তোলাবাজির প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এত বেকার মানুষ কোথায় যাবেন। রেল আমাদের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করুক।
ফুটপাত ব্যবসায়ী সাহাজাদা হোসেন কিনু বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরপিএফ অফিস থেকে আমাদের ফোন করে কয়েকজনকে ডেকে পাঠায়। যদিও আমাদের অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। স্টেশনের মেন গেটের সামনে আরপিএফ ইন্সপেক্টর দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরা বলি, বুধবার থেকে দোকান লাগাচ্ছি। তখন তিনি বলেন, টেবিল লাগিয়ে ব্যবসা করুন। কিন্তু দোকান পিছু পাঁচ হাজার টাকা করে দিতে হবে। আমরা রাজি না হওয়ায় বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই সেটা স্পষ্ট হবে। সামান্য দোকান চালিয়ে সংসার চালানোই দায়, সেখানে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দেব কীভাবে। এদিন আরপিএফকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, এক টাকাও দেব না। যদি পারেন দোকানের মাল ফেলে দিন বা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যান।
যদিও টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন আরপিএফ ইন্সপেক্টর বলেন, ওরা মনগড়া কথা বলছেন। আসলে এখান থেকে উপরমহলে ছবি পাঠিয়ে দিয়ে বলছে রেলের জায়গা দখল করে ব্যবসা চলছে। এখানে আমার কী করার আছে। আমি জানি ওরা সকলেই গরিব। কিন্তু সরকারি চাকরি করছি। উপরমহল থেকে যে নির্দেশ আসবে তা তো পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আপাতত উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত রাখা হল। পরবর্তী সময়ে নির্দেশ এলে উচ্ছেদ অভিযানে নামা হবে।