নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও মালদহ: মোটিভ নিয়ে ধোঁয়াশার মাঝেই মালদহের তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার খুনে নতুন মোড়। টানা ২১ ঘণ্টা জেরা শেষে গ্রেপ্তার করা হল দলের টাউন সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারিকে (নন্দু)। আর এক কুখ্যাত অপরাধী স্বপন শর্মাকেও বুধবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। দু’জনকে আদালতে পেশ করলে তাদের তিনদিনের পুলিস হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। দলের টাউন সভাপতির গ্রেপ্তারের ঘটনায় ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর সাফ দাবি, ‘দুলাল সরকারকে মেরেছে বলেই নন্দু গ্রেপ্তার হয়েছে।’
নন্দু ও স্বপনই খুনের মূল চক্রী বলে বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেছেন রাজ্য পুলিসের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। তিনি বলেন, ‘খুনের জন্য সুপারি দেওয়া হয়েছিল। রফা হয় ৫০ লক্ষ টাকায়। এই টাকা কোথায় কীভাবে হাতবদল হয়েছে, সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ধৃতদের জেরা করে খুনের মোটিভ জানার চেষ্টা চলছে।’
তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, নন্দু নিজেই খুনের সুপারি দিয়েছিল স্বপনকে। তার সঙ্গে আবার বিহারের কাটিহারের ‘সুপারি কিলার গ্যাং’-এর যোগাযোগ ছিল। সুপারি পাওয়ার পর কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহনের সঙ্গে কথা বলে স্বপন। পুরো দায়িত্ব নেওয়ার পর ইংলিশবাজারের দুই বাসিন্দা অভিজিৎ ঘোষ ও অমিত রজককে এলাকা রেকি করতে বলে রোহন। সেটা হয়েছে খুনের তিন-চারদিন আগে। কিলাররা কোন পথ দিয়ে ঢুকবে, পালানোর রাস্তা, কোথায় সিসি ক্যামেরা আছে, খুঁটিয়ে দেখে অমিত এবং অভিজিৎ। এমনকী বাবলা কখন কোথায় যান, তাঁর সঙ্গে কখন ক’জন সঙ্গী থাকেন, কখন একলা থাকেন, সবটাই রেকি করা হয়। সেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলি অমিত এবং অভিজিৎ জানায় স্বপনকে। এরপর নন্দু ও স্বপন মিলে খুনের পরিকল্পনার পর গোপন ডেরায় রোহনের সঙ্গে বৈঠক করে।
রোহনের নির্দেশেই খুনে ব্যবহৃত পিস্তল সরবরাহ করেছিল বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা আব্দুল গনি। এই গনি মুঙ্গের থেকে বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র সরবরাহ করত। খুনের ঘটনায় মোট চারটি বাইক ব্যবহার করা হয়। ওই বাইকগুলি জোগাড় করে নম্বর প্লেট পাল্টে দিয়েছিল বিহারের কাটিহারের আর এক বাসিন্দা শামি আখতার ও ইংলিশবাজারের টিঙ্কু ঘোষ।
২ জানুয়ারি সকালে বাবলা নিজের কারখানার কাছে খুন হওয়ার পর বাইকগুলি সরানোর দায়িত্ব ছিল অভিজিৎ এবং অমিতের কাঁধে। নরেন্দ্রনাথ এবং স্বপনের সঙ্গে তাদের ‘সুপারি কিলিং’ নিয়ে কথোপকথনের বিষয়টি ইতিমধ্যে ধৃত অভিজিৎ, গনি ও অমিত জেরায় স্বীকার করেছে। তারা জানায়, এই ঘটনায় তারা বোড়ে মাত্র। তাদের নিয়ে এসেছিল এখনও অধরা রোহন রজক। স্বপন ও নন্দুর সঙ্গে রোহনের একাধিকবার কথাবার্তা হয়। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য একটি মামলায় জেলে থাকাকালীন এই রোহনের সঙ্গে স্বপনের পরিচয় হয়েছিল। সুপারির ৫০ লক্ষ টাকা অন্য একটি চ্যানেলের মাধ্যমে পেমেন্ট করে তারা।