• বিমা নেই ৯৬ শতাংশ ভারতীয়ের, মোদি জমানায় প্রিমিয়ামের টাকা জোগাতে হিমশিম মধ্যবিত্ত
    বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: বিমার আওতায় সব ভারতীয়। প্রতিশ্রুতি না হলেও কেন্দ্রের প্রচার তো বটেই। আর তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডেডলাইন দিয়েছেন ২০৪৭ সাল। কেন? কারণ, ওটাই ভারতের স্বাধীনতার শতবর্ষ। কিন্তু প্রশ্ন হল, এরপরও কি মোদির ভারত বিমা করায় আগ্রহী? মোদি সরকারের পরিসংখ্যান কিন্তু সে কথা বলছে না। দেশের বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনস্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা আইআরডিএআই সাফ জানাচ্ছে, উল্টো পথে হাঁটছে ভারত। সার্বিকভাবে দেশে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা কমছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সবচেয়ে করুণ দশা স্বাস্থ্যবিমা ও অন্যান্য সাধারণ বিমার। জীবন ও সাধারণ বিমা মিলিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে এদেশে প্রতি ১ হাজারে বিমা কিনেছেন মাত্র ৩৭ জন! অর্থাৎ শতকরা হিসেবে ৯৬ শতাংশ ভারতবাসীর কোনও বিমাই নেই। এবং লক্ষ করার মতো বিষয় হল, বিমা কেনায় এই অনীহা প্রতি বছর বাড়ছে।  


    ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেনা বিমাকে সমীক্ষার আতশকাচের তলায় রাখতেই প্রকাশ্যে এসেছে এই গুরুতর পরিসংখ্যান। বিশ্বের গড় হিসেব অনুযায়ী কিন্তু প্রতি হাজারে ৭০ জন বিমা কিনে থাকেন। সেই নিরিখে ভারতের গড় প্রায় অর্ধেক। এর কারণ বেশ কিছু। প্রথমত, কম খরচে ইনস্যুরেন্স করানোর সুবিধা এদেশে নেই। অনলাইনে বিমা কেনা বা পলিসির শর্ত লাঘবের মতো কিছু পদক্ষেপ কেন্দ্র করেছে ঠিকই, কিন্তু তা সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছোয়নি। উপরন্তু ১৮ শতাংশ জিএসটির বোঝা। বিমা সংস্থাগুলিও এ ব্যাপারে বারবার অনুরোধ করছে। তারপরও টালবাহানা জারি রেখেছে মোদি সরকার। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠছে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি। মানুষের হাতে সংসার চালানোর মতো টাকা থাকছে না। তার উপর চড়া প্রিমিয়াম। বিমার পথ থেকে সরে আসা ছাড়া গতি থাকছে না মানুষের। মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যাঙ্কিং ও ফিনান্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্মরজিৎ মিত্র বলেন, ‘জীবন বিমাকে এখনও বেশিরভাগ মানুষ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। তাঁদের একটা বড় অংশ, বিশেষত নয়া প্রজন্ম বিকল্প লগ্নিতে আরও বেশি রিটার্ন পাওয়ায় জীবন বিমা কিনতে চাইছেন না। মৃত্যুর পর কত টাকা মিলবে, তা নিয়ে ভাবতে তাঁরা আগ্রহী নন। সরকারের উচিত বিমা পলিসিকে আকর্ষণীয় করা।’ 


    একটি বেসরকারি বিমা সংস্থার সমীক্ষা বলছে, দেশে চিকিৎসা খরচ বছরে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রতি ১০০ জনে ২৩ জন সেই খরচ জোটাতে বাজার থেকে ধার করছেন। ৬২ জন তা দিচ্ছেন নিজের জমানো টাকা থেকে। এই পরিস্থিতিতে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যবিমা চালু করার উদ্যোগ কেন সরকার নেবে না, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।  
  • Link to this news (বর্তমান)