গ্রামীণ অর্থনীতি বাঁচাতে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ বৃদ্ধি করুন, বাজেটের মুখে কেন্দ্রের উপর চাপ বাড়াচ্ছে সঙ্ঘ
বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: গত ১০ বছর ধরে বাজেট অর্থমন্ত্রক প্রস্তুত করলেও, তার পিছনে থাকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ছায়া। কিন্তু এবার নরেন্দ্র মোদি একক গরিষ্ঠতাহীন। তাই সরকারের নীতি নির্ধারণে জায়গা ছাড়তে হচ্ছে তাঁকে। একদিকে বিজেপির ‘দুর্বলতা’র সুযোগ নিচ্ছে শরিকরা। পাশাপাশি পরোক্ষভাবে চালকের আসনে বসে পড়েছে আরএসএস। তারা চাইছে, গ্রামীণ অর্থনীতি বাঁচাতে আসন্ন বাজেটে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করুক কেন্দ্র। আর সেব্যাপারে অর্থমন্ত্রক স্পষ্ট বার্তা পেল বুধবার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দপ্তরে হাজির হয়ে গ্রাম, গরিব, কৃষির জন্য কী কী চাই তার ফিরিস্তি, সুপারিশ এবং তালিকা দিয়ে এলেন কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তা আদতে আরএসএসেরই এজেন্ডা তথা দাবি। কারণ মোদি সরকারের একঝাঁক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীর মধ্যে শিবরাজ এক বিশেষ নাম। তাঁকে ছেঁটে দেওয়ার বহু চেষ্টা করেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু সঙ্ঘের আশীর্বাদে প্রথম সারিতে তিনি রয়ে গিয়েছেন বহাল তবিয়তে। সেই শিবরাজ এদিন নর্থ ব্লকে এসে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাজেট নিয়ে বৈঠক করলেন। বিশেষ করে জানালেন, ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার। এবং সঙ্ঘ চায়, ওই প্রকল্পে এবার যেন মজুরিও যথেষ্ট বেশি হারে বাড়ানো হয়। গত বছর মূল্যবৃদ্ধির তীব্র দহনের মধ্যে ১০০ দিনের কাজে গড়ে কত টাকা মজুরি বাড়িয়েছিল মোদি সরকার? মাত্র ২৮ টাকা!
মোদি জমানার শুরু থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন নীতিন গাদকারি এবং রাজনাথ সিং। দু’জনেই সঙ্ঘের প্রিয়পাত্র। কিন্তু একক গরিষ্ঠতায় বলীয়ান নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় তাঁদের তেমন কোনও প্রভাব ছিল না। ২০২৪ সালে সেই তালিকায় জুড়েছেন মধ্যপ্রদেশের চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ। সেরাজ্যে বিজেপি সরকার গঠন করলেও তাঁকে গদিতে ফেরানো হয়নি। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল গুরুত্ব হারাচ্ছেন তিনি। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে ২৪০ আসনে আটকে যাওয়ায় শেষপর্যন্ত সঙ্ঘের চাপে সেই শিবরাজকে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিতে বাধ্য হয়েছেন গরিষ্ঠতাহীন মোদি। সরকারের অন্যতম প্রধান দুই মন্ত্রক গ্রামোন্নয়ন এবং কৃষি তাঁর হাতে। আরএসএসের নীতি ও আদর্শই হল স্বদেশি ও গ্রামবিকাশ। মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়া যেহেতু ‘ফ্লপ’, তাই এবার বাজেটে গ্রামীণ বিকাশের উপর বেশি করে জোর দিতে চাইছে তারা। শিবরাজ নিজেই এদিন বলেছেন, ‘১০০ দিনের কাজে জোর দেওয়ার কথা বলেছি অর্থমন্ত্রীকে। আশা করা যায় কৃষিমুখী হবে বাজেট।’
চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ হয়েছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগের আর্থিক বছরে তা ছিল ৬০ হাজার কোটি। যদিও বছরের শেষে তা পৌঁছে যায় ৯৮ হাজার কোটি টাকায়। তা সত্ত্বেও চলতি বছরে বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেয় মোদি সরকার। অথচ গত ডিসেম্বরেও দেখা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজের চাহিদা প্রবল। কারণ, শহরে কাজ নেই। ইতিমধ্যেই ৮২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আসন্ন বাজেটে বেশি বরাদ্দের দাবি জানিয়ে এলেন শিবরাজ। বোঝাই যাচ্ছে, সঙ্ঘ চাইছে গ্রামমুখী বাজেট!