টাকা ফেললেই বাংলাদেশিদের হাতে পৌঁছে যেত মনমতো নথি, নেপথ্যে বারাসত আদালতের প্রাক্তন ল’ক্লার্ক
বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: নিজের বাড়িতেই ‘অস্থায়ী’ অফিস খুলে চলছিল ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির কারবার। গোপন সূত্রে সেই খবর পাওয়ার পর ডেরায় হানা দিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল বারাসত থানার পুলিস। ধৃতের নাম সমীর দাস। তার বাড়ি বারাসতের নবপল্লি এলাকায়। তিনি বারাসত জেলা আদালতের ল ক্লার্ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে একজন পুলিসে চাকরি করেন। অন্যজন দন্ত চিকিৎসক। এখন একটি মুদিখানা চালান সমীর। তার আড়ালেই তিনি ভুয়ো ভোটার কার্ড, আধার, প্যান, জন্ম শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়ার কারবার চালাতেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ধৃতের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই ফোন থেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরির চক্রের কয়েকজন দালালের ফোন নম্বর উদ্ধার হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, নবপল্লিতে একটি প্রাসদোপম তিনতলা বাড়ি রয়েছে ধৃতের। সেই বাড়িতে অস্থায়ীভাবে একটি তথ্যমিত্র কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তিনি। প্রায় দু’বছর ধরে সেটি চালু ছিল বলেই অভিযোগ। পুলিসও নজরে রেখেছিল। ভুয়ো পাসপোর্ট কাণ্ডে বারাসতের সমরেশ বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে গ্রেপ্তার হতেই তদন্তকারীদের স্ক্যানারে চলে আসেন সমীর। মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় বারাসত থানার বিশাল পুলিস বাহিনী। চলে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ। তাতে অসঙ্গতি মেলায় বুধবার সকালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিনই তাঁকে বারাসত আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিস। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ধৃত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস আরও জানতে পেরেছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আগে বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে ভারতে আসতেন। সাধারণত এক মাসের ভিসা থাকত। কিন্তু চিকিৎসার জন্য কারও কারও আরও বেশি সময় লেগে যেত। মূলত তাঁদের এদেশে আরও কিছুদিন থাকার ব্যবস্থা করে দিতে জাল নথি ব্যবহার করে ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিতেন সমীর। তাঁর সঙ্গে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি চক্রের একাধিক ব্যক্তির যোগাযোগ ছিল। তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশি নাগরিকদের এদেশে থাকার ব্যবস্থা পাকা করতেন সমীর। জাল পরিচয়পত্র তৈরির ক্ষেত্রে ধৃত নিজের আত্মীয়ের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করতেন বলে পুলিস জানতে পেরেছে। স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় পাল ও আরতি ভদ্র বলেন, ‘মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিস ওদের বাড়িতে ঢোকে। তারপর কী হয়েছে, জানি না। প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে থাকলেও ওরা খুব একটা কথা বলত না কারও সঙ্গে।’ বুধবার সকাল থেকে বাড়ির গেট বন্ধ ছিল। পরিচারিকাও ফিরে যান। কিছুক্ষণের জন্য গেট খুলেছিলেন ধৃতের স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উনি মুদি দোকান চালান। পুলিস এসে আধার কার্ড নিয়ে গিয়েছে। স্বামী কোনও খারাপ কাজে জড়িত নয়।’
বারাসত পুলিস জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া বলেন, ‘ধৃত বারাসত আদালতে ল ক্লার্ক ছিলেন। বাংলাদেশিদের ভুয়ো ভারতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ধৃতের যোগ পাওয়া গিয়েছে।’