• খাস কলকাতায় ভুয়ো ডাক্তার! বিনা রেজিস্ট্রেশনে চলছে রোগী দেখা
    বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৫০এ, বঙ্কুবিহারী চ্যাটার্জি রোড। কসবা এলাকার এক ত্বকের চিকিৎসকের চেম্বার এই ঠিকানায়। জেনারেল ফিজিসিয়ান হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। চেম্বারের বাইরে থেকেই আঁচ পাওয়া যায়, অন্দরমহল ঝাঁ-চকচকে। ভিতরে ঢুকলেই সুবাস ভেসে আসে। সকাল-বিকেল মিলিয়ে রোজ সাড়ে তিন ঘণ্টা চেম্বার চালান ‘ডাক্তারবাবু’। স্থানীয়দের দাবি, বছর ২০ ধরে চলছে এই চেম্বার। কিন্তু সেই স্থানীয়রাই এখন প্রশ্ন তুলছেন, তিনি কি আদৌ চিকিৎসক? ডিগ্রি আছে? রেজিস্ট্রেশন নম্বর আছে? এসব প্রশ্ন উঠছে কারণ, অনেকের ত্বকের রোগ সারছে না। তাঁর লেখা ওষুধই ভুল, বলছেন কেমিস্টরা। এই আবহে ‘ডাক্তার’ সৌমিত্র চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন কসবার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গেল, তাহলে কি এবার খাস কলকাতায় ভুয়ো চিকিৎসকের হদিশ মিলল? 


    ৫ জানুয়ারি কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এলাকার ৩১ জন স্বাক্ষর করেন সেই অভিযোগপত্রে। কসবা থানার অফিসার ইন চার্জকে লেখা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই চেম্বার খুলে বসেছেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর গ্রেপ্তারি ও শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। পুলিস সূত্রে খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই ব্যক্তির চিকিৎসক রেজিস্ট্রেশন ও ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের শংসাপত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে পাঠানো হতে পারে বলেও পুলিস সূত্রে খবর। ‘বর্তমান’-এর হাতেও এসেছে সৌমিত্রবাবুর একাধিক প্রেসক্রিপশন। তাতে দেখা যাচ্ছে, নামের পাশে লেখা এম ডি। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি পাশ করেছেন, তাঁর কোনও উল্লেখ নেই। শুধু তাই নয়, তাঁর প্রেসক্রিপশনে লেখা নেই রেজিস্ট্রেশন নম্বরও। আইএমএ’র নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনও চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক। বিনা রেজিস্ট্রেশন নম্বরে ডাক্তারি করলে গ্রেপ্তার হতে পারেন তিনি। দোষী সাব্যস্ত হলে ৬ বছরের জন্য হাজতবাস হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন রয়েছে, এমন ডাক্তারবাবুরাও যদি প্রেসক্রিপশনে নম্বর না লেখেন, সেক্ষেত্রে বাতিল হতে পারে রেজিস্ট্রেশন। 


    সম্প্রতি কসবার এক তরুণী কুকুরের কামড় খেয়ে সৌমিত্রবাবুর চেম্বারে যান। অভিযোগ, তিনি প্রেসক্রিপশনে কয়েকটি ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও সেগুলি কখন কোনটা নিতে হবে, সেসব নিয়ম লিখে দেন। সেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ কিনতে গেলে দোকানদার জানান, কয়েকটি ভুলভাল ওষুধ রয়েছে। ভালো কোনও চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন তিনি। এরপর কসবা এলাকার আরও এক চিকিৎসককে সেই প্রেসক্রিপশন দেখালে একই কথা বলেন তিনি। এরপরেই প্রশ্ন ওঠে, সৌমিত্রবাবু আদৌ চিকিৎসক তো? স্থানীয় চিকিৎসক মহলেরও দাবি, তিনি আসলে ভুয়ো ডাক্তার। বড়সড় বিপত্তির আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত সুরাহা চাইছেন অভিযোগকারীরা। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হয় সৌমিত্রবাবুকে। তিনি সবটা শুনে ফোন কেটে দেন। এরপরে আরও দু’বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
  • Link to this news (বর্তমান)