কোটি টাকা তোলাবাজি, ব্যবসায়ীকে মারধরে গ্রেপ্তার তৃণমূল নেতা
বর্তমান | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতায় ফের তোলাবাজির অভিযোগ। তাও আবার খোদ শাসকদলের দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে। বেলেঘাটা অঞ্চলে আবাসনের মিউটেশন করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ১ কোটি টাকা দাবি। না দেওয়ায় নির্মাণ ব্যবসায়ীর গাড়ি আটকে রাখা ও জোর করে ব্ল্যাঙ্ক চেকে সই করিয়ে নেওয়া। তাতেও রেহাই মেলেনি। বেধড়ক মারধরও জুটেছে, এমন অভিযোগও রয়েছে তালিকায়। এরপরই তোলাবাজি ও মারধরের অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুশান্ত সাহা ওরফে হাবুকে গ্রেপ্তার করেছে বেলেঘাটা থানার পুলিস। বুধবার সন্ধ্যায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় জড়িত নেতার তিন-চারজন অনুগামী ফেরার। তাঁদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিস।
বেলেঘাটা থানা এলাকার সিআইটি রোডের উপরেই একটি আবাসনের বেসমেন্টে অফিস রয়েছে হাবুর। স্থানীয় বিশ্বস্ত সূত্রের অভিযোগ, ইদানিং সেই অফিসেই ‘ক্যাসিনো’ স্টাইলে জুয়ার ঠেক চালানো হচ্ছিল। কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনারের (ইস্ট সাবার্বান ডিভিশন) অফিসের ঠিক উল্টোদিকেই এ ঘটনার সূত্রপাত। পুলিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাবুর ওই অফিসে ডেকে পাঠানো হয় নির্মাণ ব্যবসায়ী কাজল মণ্ডলকে। প্রায় ৩০ লাখির ‘হেক্টর’ গাড়ি নিয়ে একাই বেলেঘাটা আসেন ওই ব্যবসায়ী। ওই আবাসনের বাড়ির পিছনের দিকে বেসমেন্টের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় কাজলকে। সেখানেই একটি প্রোমোটিং সাইটের মিউটেশন করানো নিয়ে প্রাথমিকভাবে বচসা বাঁধে হাবু ও তাঁর মধ্যে। অভিযোগ, এক কোটি টাকা না দিলে মিউটেশনের ব্যবস্থা করা হবে না— তৃণমূল নেতা এমন হুমকি দেন বলে অভিযোগ। টাকা দিতে অস্বীকার করেন কাজল।
পুলিস জানিয়েছে, বেসমেন্টের ওই অফিসে প্রায় ঘণ্টা তিনেক আটকে রাখা হয় ব্যবসায়ীকে। অভিযোগ, তাঁর থেকে কেড়ে নেওয়া হয় এসইউভি গাড়ির চাবি ও মোবাইল ফোন। ব্যবসায়ীর পকেটে ছিল ব্যাঙ্কের চেক বুক। তাও ছিনিয়ে নেয় হাবুর সঙ্গীসাথীরা। বেসমেন্টের ঘরে আটকে থাকার পরও টাকা দিতে রাজি হননি ব্যবসায়ী। তাতেই শুরু হয় মারধর। কাজল পুলিসকে জানিয়েছেন, হাবু সহ মোট চারজন অফিস ঘরের মাটিতে ফেলে তাঁকে এলোপাথাড়ি চড়, ঘুসি, লাথি মারে। তার জেরে গুরুতর জখম হন ব্যবসায়ী। সেই অবস্থাতেই ফাঁকা তিনটি চেকে মোট ১ কোটি টাকার অঙ্ক লিখে ব্যবসায়ীকে দিয়ে সই করিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। এরপরে অফিস ঘরের ভিতরেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন কাজল। অভিযোগ, এই সুযোগে ‘হেক্টর’ গাড়িটি অন্যত্র লুকিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।
মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাস্থল থেকে কোনওক্রমে বেরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান ব্যবসায়ী। এরপর বেলেঘাটা থানার দ্বারস্থ হন তিনি। তাঁর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার মামলা রুজু করে পুলিস। এরপরেই গ্রেপ্তার করা হয় হাবুকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, বেলেঘাটা অঞ্চলের একটি নামী পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুশান্ত ওরফে হাবু সাহা ব্যক্তি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, হাবু তাঁর বেসমেন্টের অফিসের ভিতরে অত্যন্ত গোপনে ‘ক্যাসিনো’র কারবার ফেঁদে বসেছিলেন। কীভাবে খাস কলকাতায় লুকিয়ে জুয়ার ব্যবসা? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে। গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে