সঞ্চিতা মুখোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
একা হাতিতে রক্ষা নেই, বাঘ দোসর। দুইয়ের মাঝে এখন আতঙ্কে কাঁটা পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষ। জ়িনাত রাজ্য ছাড়তেই নতুন করে একটি বাঘের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে ঝাড়খণ্ডের দলমা সংলগ্ন চান্ডিল এলাকায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঘটি একটি বোলেরোর সামনে চলে এসেছিল বলে দাবি করেছেন ওই গাড়ির চালক। ওই এলাকার কয়েক কিমি–এর মধ্যেই পুরুলিয়া।
এ দিকে, বাঘের আতঙ্কের মধ্যেই পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দলমার দাঁতালরা। দুই দিক সামলাতে জেরবার বন বিভাগ। সঙ্গে গ্রামবাসীও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন করে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বাঘমুন্ডিতে। ওই দিন সন্ধ্যায় চান্ডিলের এক গাড়িচালক অল্পের জন্যে বাঘের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন বলে ওই এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।
চান্ডিল গোল চক্করের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর বোলেরো গাড়িটির একেবারে সামনে বাঘটি চলে আসে বলে দাবি করেছেন ওই চালক। ওই এলাকার রসুনিয়া জঙ্গলের কাছে একটি ঢালাই রাস্তা সে দিনেই করা হয়েছে। বুধবার সকালে ওই রাস্তায় বাঘের থাবার ছাপ নজরে পড়ে। এ প্রসঙ্গে চান্ডিলের রেঞ্জ ফরেস্ট অফিসার শশী রঞ্জন প্রকাশ বলেন, ‘রামপ্রসাদ মাহাতো নামে এক চালক বাঘের মতো কিছু দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। ওই এলাকা দিয়ে বাঘ কাংলাট্যাঁড় জঙ্গলের দিকে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পায়ের ছাপও।’
এই এলাকা থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরেই অযোধ্যার পাহাড় ও বনাঞ্চল। গতিপথ পাল্টে সে দিকেও বাঘ চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ। তিনি বলেন, ‘বাঘের গতিবিধির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্ক রয়েছেন বনকর্মী ও আধিকারিকরা।’ বাঘের সঙ্গে রয়েছে হাতিও।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে ৩০টির মতো হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে অযোধ্যা পাহাড়, ঝালদা–বাঘমুন্ডির সীমানায়। কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি জাবর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি দাঁতাল। বাঘমুন্ডির মাঠা রেঞ্জের চড়কপাথর মৌজায় রয়েছে ১২টি হাতির দল। এই এলাকারই আটনা ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে রয়েছে দু’টি হাতি। অন্য দিকে, ঝালদা রেঞ্জের মহুলটাঁড় ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানায় রয়েছে ১৫টি হাতি।
বনকর্মীদের দাবি, ফসল পাকার সময়েই হাতির আনাগোনা বাড়ে। তাই হাতি আর নতুন উপদ্রব বাঘ, দুইয়ের দিকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হচ্ছে বনাধিকারিকদের। গ্রামবাসীকে সতর্ক করে প্রচারও চালানো হচ্ছে। বাঘমুন্ডির বিট অফিসার সাহেব মাহাতো আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘হাতি এই অঞ্চলে এমনিতেই ঘুরে বেড়ায়। তাদের বিরক্ত না করার জন্যই সচেতন করা হয় মানুষকে। এখনও তাই হচ্ছে। মানুষকে অযথা জঙ্গলে ঢুকতে নিষেধ করা হচ্ছে। বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নজরদারির উপরে।’
বনকর্মীদের টহল, প্রচারেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না। সিমনি জাবর এলাকার বাসিন্দা জয়রাম মুর্মু বলেন, ‘জঙ্গলের উপরে এই এলাকার মানুষ নির্ভরশীল। গৃহপালিত পশুদের ঘাস খাওয়ানো, শুকনো কাঠ সংগ্রহ সবই করতে হয় জঙ্গলে। এখন বনের ধারে কাছে যেতে ভয় লাগে।’ হেপাডের নির্মল সিং মুড়া বলেন, ‘জঙ্গলের পাশেই বাস আমাদের। হাতি নিয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন্তু, এখন শুনছি জেলায় বাঘও ঢুকছে। কী হবে কে জানে।’