• সাধু বন গয়া কিলার, শান্তি খুঁজতে শ্মশানে থেকেও খুনের চক্রান্ত
    এই সময় | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    ভালো নাম প্রকাশ পান্ডে। সবাই পিপি নামে চেনে। কুখ্যাত দুষ্কৃতী। খুন, ডাকাতি, তোলাবাজি— সব ধরনের অভিযোগ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের আলমোড়া জেলে বন্দি এই দুষ্কৃতী ধরেছেন সাধুর ভেক। জেলের মধ্যেই দীক্ষা নিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন প্রকাশানন্দ গিরি। এ মাত্র মাস চারেক আগের কথা। স্বপন শর্মার কাহিনি এমন রাতারাতি ভোলবদলের নয়। ধীরে ধীরে নিজেকে বদলে ফেলেছিলেন তিনি। তবে হঠাৎ ছন্দপতন। তৃণমূল নেতা খুনে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দুর সঙ্গে মূলচক্রী হিসেবে তাঁকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

    পিপি নয়, মালদার মানুষ অবশ্য স্বপনকে দেখে দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকির উদাহরণ টানেন। বাহাত্তরেও টানটান শরীর। পাঁচ ফুট উচ্চতা। সন্ন্যাসীদের মত লম্বা পাকা দাড়ি। চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। পৈত্রিক বাড়ি ইংরেজবাজারে। নিয়মিত বাড়িতে শরীর চর্চা করেন। মালদা ও আশপাশের জেলায় বিভিন্ন মন্দির সংস্কার, মালদার সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানের নিজের গাঁটের কড়ি খরচা করে আধুনিক রূপ দিয়েছেন তিনি।

    শহরের অতুল মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় কোটি টাকা ব্যয়ে রাধাকৃষ্ণের মন্দির গড়েছেন। মূলত বাম জমানার অবসান হওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ছোট ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে আরও বড় আঘাত পান। নিজেকে সব সময়ে আড়ালে রাখার চেষ্টা করতেন। ইংরেজবাজার শহরের অতুল মার্কেটের তাঁর ব্যক্তিগত অফিস রয়েছে। সেটি ধূমকেতু ক্লাব বলেও পরিচিত। প্রতি বছরই ওই ক্লাবে ধুমধাম করে কালীপুজো করেন। তবে শহরে কোনও সময়ে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যেত না। সময় কাটাতেন বিভিন্ন মন্দির এবং শ্মশানে।

    বাল্মীকির পথ অনুসরণ করে চলা স্বপন এক সময়ে এলাকার ‘ডন’ ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক খুন, বোমাবাজি, তোলাবাজি, সংঘর্ষের অভিযোগ ওঠে সেই সময়ে। বাম জামানায় মালদার ইংরেজবাজার শহরের নেতা মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। রতুয়ার বিধায়ক শৈলেন সরকার মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে আরও দোর্দণ্ডপ্রতাপ হয়ে ওঠেন।

    ১৯৯৩ সালে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীর অনুগামী নিতাই সরকারকে গুলি করে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯৯৪ সালে কালিতলা এলাকায় কংগ্রেস পার্টি অফিসের সামনে বোমার হামলায় খুন হন বিমল প্রসাদ। সেই ঘটনাতেও অভিযুক্ত হন তিনি। দু’বার জেলও খাটেন। ফের তৃণমূলল নেতা দুলাল সরকার খুনে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভাগ্যের পরিহাসে ইংরেজবাজারের সাদুল্লাপুর মহাশ্মশানে নয় এখন তাঁকে শান্তি খুঁজতে হবে কারাগারে।

  • Link to this news (এই সময়)