দু’সপ্তাহ আগের ঘটনা। দু’টি পৃথক দুর্ঘটনায় মারা যান দু’জন মোটরবাইক চালক। গৌতম চৌধুরী এবং সরফরাজ শেখ নামে ওই দু’জন বাইক–চালকের মাথাতেই ছিল হেলমেট। তার পরেও প্রাণে বাঁচানো যায়নি দু’জনকে।
‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ ক্যাম্পেনে কলকাতায় দুর্ঘটনায় অনেকটা রাশ টানা গিয়েছে বলেই দাবি লালবাজারের। কিন্তু সেই সাফল্যে চোনা ঢেলে দিচ্ছে একটি বিষয়। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা যাচ্ছে, হেলমেট ব্যবহার করা বাইক–চালকদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, হেলমেট ব্যবহারের পরেও কেন এই অবস্থা! এ ক্ষেত্রে যা জানা যাচ্ছে, তা হলো—হেলমেটের ব্যবহার বাড়লেও গুণগত ভাবে ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার না করার ফলেই বাড়ছে মৃত্যু।
হেলমেট বিক্রেতাদের একাংশের বক্তব্য, ‘পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বাইক–চালকদের মধ্যে আগের তুলনায় হেলমেটের ব্যবহার অনেকটা বেড়েছে। তবে গুণমানের সঙ্গে আপস করে অনেকেই কম দামের হেলমেট কেনার দিকে ঝুঁকছেন৷ সে কারণেই প্রাথমিক ভাবে মাথা ঢাকা গেলেও দুর্ঘটনার সময়ে তা কাজে আসছে না।’ কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তার বক্তব্য, ‘সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সবাইকে ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করতে বলা হয়৷ কিন্তু অনেকে সে খেয়াল রাখেন না। ট্র্যাফিক গার্ডগুলিকে এ বিষয়ে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে।’
দুর্ঘটনায় রাশ টানতে, বিশেষ করে বাইক দুর্ঘটনার মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে হেলমেট ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই৷ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ‘নো হেলমেট -নো পেট্রল’–এর নির্দেশিকা জারি হয়েছে, বাইক ডিলারদের প্রতিটি বাইক বিক্রির সঙ্গে গ্রাহককে দু’টি করে হেলমেট বিনামূল্যে দেওয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে শহরের বিভিন্ন ট্র্যাফিক গার্ডে নিয়মিত আয়োজন করা হয় কর্মশালা।
এ সব সতর্কতার ফলে দুর্ঘটনা, বিশেষ করে বাইক দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে বলে দাবি কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের। তবে হেলমেট ব্যবহার করেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, যা মস্ত মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। লালবাজার সূত্রে খবর, ২০২৩–এ হেলমেট ব্যবহার করে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৷ সেখানে ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৪। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্ঘটনার তদন্তে অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, মৃত বা আহত ব্যক্তি আদৌ ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করেননি৷
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করলে বাইক দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলেও তাঁর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৮০ শতাংশ। সে কারণেই শুধু হেলমেট ব্যবহার করা নয়, চালকদের আইএসআই ফোর ওয়ান, ফাইভ ওয়ান ক্যাটিগরির হেলমেট ব্যবহার করতে বলা হয়। যেগুলির প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু অনেকেই কিছু টাকা বাঁচাতে কম দামের হেলমেট কিনতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন।
মঙ্গলবার ওয়েলিংটন, এজেসি বোস রোডের বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪০০ টাকা দামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হেলমেট রয়েছে বাজারে৷ তবে ৫০০ টাকার নীচে হেলমেটে আইএসআই মার্ক থাকে না। আইএসআই মার্ক থাকা মানে সেই হেলমেটগুলি ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস–এর স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী তৈরি।
ওয়েলিংটনের হেলমেট ব্যবসায়ী আখতার আলম বলেন, ‘হেলমেট ব্যবহার নিয়ে পুলিশের কড়াকড়িতে চালকরা হেলমেট বেশি কিনছেন। তবে সব থেকে ভালো মানের হেলমেট দেখানো হলেও কম দামের হেলমেট কেনার ঝোঁকই বেশি। দুর্ঘটনায় সেগুলির ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ ভালো মেটিরিয়াল দিয়ে তৈরি শক্তিশালী হেলমেট দেখানো হলেও শুধু পুলিশের হাত থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হিসেবে অনেকে হেলমেট কিনছেন মান বিচার না করেই!’