• বাঘের জঙ্গলে নজর ABT-র? তদন্তে পুলিশ
    এই সময় | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    রাজ্যের প্রান্তিক জেলা আলিপুরদুয়ারের বেশ কিছু এলাকার দুর্গম অবস্থানের জন্যই কী ওই জেলাকে সফট টার্গেট করেছে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম(এবিটি)? তেমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে গোয়েন্দা সতর্কতায়। কেন বেছে বেছে আলিপুরদুয়ারকে নিজেদের নিরাপদ ঘাঁটি বানাতে চাইছে ওই জঙ্গি সংগঠন?

    গোয়েন্দাদের বিশ্লেষণ, ওই জেলার পূর্ব দিকে রয়েছে অসম সীমানা, দক্ষিণের জেলা কোচবিহার থেকে বাংলাদেশ প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে। উত্তর দিকে প্রতিবেশী দেশ ভুটানের অরক্ষিত সীমান্ত। জেলার পশ্চিম দিকেও ভুটান।

    ফলে শুধুমাত্র ভৌগোলিক অবস্থানের জন্যই আলিপুরদুয়ারকে বরারব পছন্দ করে জঙ্গি সংগঠন গুলি। ইতিহাস খু্ঁজলে দেখা যাবে যে, জেলার প্রান্তিক ব্লক কুমারগ্রাম এক সময় কেএলওর আঁতুড় ঘর হয়ে উঠেছিল। সাবেক জলপাইগুড়ি জেলার যে কোনও প্রান্তে নাশকতা ঘটিয়ে কুমারগ্রামকে ব্যবহার করে ভুটানের কালিখোলা কিংবা ভুটান ঘাট হয়ে কেএলও জঙ্গিরা প্রতিবেশী দেশের দুর্গম গোপন ডেরায় গা ঢাকা দিতো।

    এখন ওই পথে হেঁটে আলিপুরদুয়ারকে ব্যবহার করতে মরিয়া আনসারুল্লা বাংলা টিম। আলিপুরদুয়ারকে বেছে নেওয়ার পিছনে অন্য কারণও রয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৭৬০ বর্গ কিলোমিটারের বিস্তীর্ণ জঙ্গলের ভিতর দিয়েও ভুটানের সিঞ্চুলা পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় চলে যাওয়ার একাধিক রুট রয়েছে।

    সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা ও কুমারগ্রামে একাধিক জঙ্গি বৈঠকের কথা জানতে পেরেছে। বিষয়টিকে পুলিশ যে একেবারেই হালকা নজরে দেখছে না, তা স্পষ্ট হয়েছে জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবমশীর কথায়। তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টি রাজ্য পুলিশের এসটিএফ দেখছে। আমরা সহায়তা করছি।’

    সম্প্রতি পরিবেশ আদালতের নির্দেশে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ওই টাইগার রিজার্ভে পর্যটকদের আনাগোনা নিষিদ্ধ করেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত হোটেল, রিসর্ট ও হোমস্টেগুলি। ফলে ওই বিশাল জঙ্গলে মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে জঙ্গিরা ওই এলাকাকে বৈঠকের ডেরা বানাতে পারে বলেও গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।

    ভুটান লাগোয়া আলিপুরদুয়ারের সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব রয়েছে এসএসবির উপরে। সেখানে সব সময় জেলা পুলিশকে নাক গলাতে দেওয়া হয় না বলে আকছার অভিযোগ ওঠে। এমনকী, ভুটানের পাদদেশে থাকা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ঢুকতে গেলে পুলিশকে বনদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরবঙ্গ পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘কার্গিলে জঙ্গি অনুপ্রবেশের তথ্য একজন সাধারণ মেষপালক প্রথমে দিয়েছিলেন। ফলে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন ও বনদপ্তরের তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।’

    যদিও এ বিষয়ে বনাধিকারিকরা পরিবেশ আদালতের দোহাই দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ যাদব বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছি। জেলা পুলিশ সতর্ক রয়েছে। ভুটান সীমান্তের উপর আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)