• প্রতিবেশী দেশে মাছ চাষ এ পারের মাছের পিটুইটারি গ্রন্থি দিয়ে
    এই সময় | ০৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • মাছের বাজারে চোখে পড়ে তাঁদের। সরু লম্বাটে নিডল হাতে ঘুরে বেড়ান। মাছওয়ালার সামনে কেটে রাখা পোনা মাছের মুড়ো থেকে নিপুণ হস্তে বের করে আনেন পিটুইটারি গ্রন্থি। একটি ছোট শিশিতে সেই পিটুইটারি গ্রন্থিটা রেখেই ফের অন্য মাছওয়ালার সামনে।

    কী কাজে লাগে এই পিটুইটারি গ্রন্থি?

    জানা গিয়েছে, মাছ চাষে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় এই গ্রন্থির নির্যাস। মূলত গোনাডোট্রপিক হরমোনের উৎস হিসেবে কাজ করে এই নির্যাস। সহজ করে বললে, যা মাছের ডিম তৈরিকে প্রভাবিত করে, দ্রুত করে। এই তথ্য নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ দিন ধরে পিটুইটারি গ্রন্থির নির্যাস মাছ চাষের কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু এই পিটুইটারি গ্রন্থি, যা আমার-আপনার এলাকার মাছের বাজার থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার বেশিরভাগই পাড়ি দিচ্ছে প্রতিবেশী বাংলাদেশে! এই সময়েও রপ্তানিতে ভাটা পড়েনি।

    পড়শি দেশ যখন উত্তাল, ভারত নিয়ে এত বিদ্বেষ, তার পরেও ভারতের পিটুইটারি যাচ্ছে সে দেশে?

    হাওড়ার কদমতলা বাজারে মাছের মাথা থেকে পিটুইটারি গ্রন্থি বের করার কাজটি করেন স্বরূপ লায়েক। তাঁর কথায়, ‘এ সবের জন্য ঠিক চ্যানেল আছে। আমরা এখানে যা সংগ্রহ করি, তা নির্দিষ্ট পথে পৌঁছে যায় বাংলাদেশে।’ জানিয়েছেন, তাঁকে কোথাও যেতে হয় না। কয়েক দিন অন্তর লোক এসে হিসেব করে নিয়ে চলে যায় পিটুইটারি গ্রন্থি। উত্তর ২৪ পরগনার কোনও সীমান্ত দিয়ে তা পৌঁছে যায় বাংলাদেশে।

    কিন্তু বাংলাদেশে এত নদী, প্রচুর মাছ। তাতেও ভারতীয় মাছের পিটুইটারি গ্রন্থির দরকার পড়ে? স্বরূপের মন্তব্য, ‘শুধু ঢাকা ও তার আশপাশেই ৭২০টা মাছের হ্যাচারি। এই সব জায়গায় মাছ চাষের জন্য পিটুইটারির প্রয়োজন অনেক। মাছে দ্রুত ডিম তৈরি করতে অন্য ওষুধও এখন মার্কেটে আছে। তবু দেশি পদ্ধতিতে তৈরি পিটুইটারি-নির্যাসের চাহিদা এখনও বিপুল।’

    এই মুহূর্তে পিস প্রতি পিটুইটারি গ্রন্থির দর চার টাকা। কোনও সপ্তাহে পাঁচ টাকাও হতে পারে তা। স্বরূপ বলছিলেন, ‘অনেক সময়ে ওজন দরেও বিক্রি হয়। এক কেজির দর প্রায় এক লাখ টাকা। লকডাউনের সময়ে বেজায় দর বেড়েছিল। সে সময়ে এক কেজি পিটুইটারির দর উঠেছিল এক কোটি টাকা পর্যন্ত!’

    সেই তুলনায় এখন দর কমের দিকেই। স্বরূপের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এই পিটুইটারি গ্রন্থি সংগ্রহ করে দিন-প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা তাঁর আয় হয়। আর তাঁর এই আয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মাছ চাষেরই।

    যশোরের এক সূত্রেরও বক্তব্য, বিপুল সংখ্যক হ্যাচারি থাকায় পিটুইটারির চাহিদা বিপুল। তাই ভারত থেকে তা পৌঁছয় সেখানে।

  • Link to this news (এই সময়)