এই সময়: জমি জালিয়াতি রুখতে তৎপরতা বাড়াল কলকাতা পুরসভা। পুর–সূত্রে খবর, শহরে যত মালিকানাহীন জমি রয়েছে খুব শিগগিরই তার দখল নেবে পুরসভা। কেউ যাতে দলিল জাল করে অন্যের জমি হাতিয়ে নিতে না পারে তার জন্যে এখন থেকে পরচা না দেখে আর জমি–বাড়ির মিউটেশনও করবে না পুরসভা। বুধবার মেয়র পারিষদ বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা শহরে প্রচুর মালিকানাহীন জমি রয়েছে। যার বর্তমান বাজারদর কয়েক হাজার কোটি টাকা। আইন অনুসারে, শহরে যত মালিকানাহীন জমি রয়েছে তার মালিক পুরসভাই। যদিও সেই জমির বড় অংশই ভোগদখল করছেন অন্যরা। কোথাও কোথাও বাড়ি–দোকানঘরও তৈরি হয়েছে।
কোনওটা আবার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে। স্থানীয়রা ভ্যাট হিসাবে ব্যবহার করছেন। দীর্ঘদিন ধরে জঞ্জাল জমে থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও তৈরি হচ্ছে। ডেঙ্গি–ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এই সব বহু মূল্যবান জমি দখলে এনে সাধারণের কাজে লাগাতে চায় পুরসভা। ভবিষ্যতে সেই সব জমি নিলামেও তোলা হতে পারে।
এক মেয়র পারিষদের কথায়, ‘পুরসভার এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। টাকার অভাবে বড় কোনও কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। ঠিকাদারদের প্রাপ্য সময়ে মেটানো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় জমি বিক্রি করে যদি কিছু টাকা আসে তাতে পুরসভার আর্থিক হাল কিছুটা হলেও ফিরবে। জমিগুলিরও সদ্ব্যবহার হবে।’
অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং বিকাশ ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন জমি বিক্রি করে সব মিলিয়ে আনুমানিক ২৭০০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল কলকাতা পুরসভার। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমলেও জমি বিক্রি থেকে কয়েকশো কোটি টাকা জমা পড়েছিল পুর–কোষাগারে। কিন্তু ফিরহাদ হাকিম মেয়র হওয়ার পর সে অর্থে কোনও জমি বিক্রি হয়নি।
অর্থ দপ্তরের আধিকারিকদের অনুমান, শহরে কয়েক হাজার একর মালিকানাহীন জমি পড়ে রয়েছে। সেগুলিকে উদ্ধার করে নিলামে তুলতে পারলে পুরসভার ভাঁড়ারে কয়েক হাজার কোটি টাকা আসবে। তা দিয়ে পুরসভার দেনা মেটানো যাবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে বেআইনি জবরদখল। মালিকানাহীন জমিতে বহু মানুষ বছরের পর বছর বসবাস করছেন।
এর সঙ্গে তাঁদের রুটি–রুজিও জড়িত। ফলে তাঁদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হতে পারে। সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে জমিগুলির দখল নেওয়া পুরসভার কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ।
কলকাতা পুরসভার সংযোজিত এলাকায় (১০০–১৪৪ নম্বর ওয়ার্ড) জমির দলিল জাল করে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ায় এ বার থেকে পরচা ছাড়া মিউটেশনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর–কর্তৃপক্ষ। পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘অনেকে দলিল জাল করে মালিকানা পাল্টে পুরসভা থেকে মিউটেশন করিয়ে নিচ্ছেন। পরে তা নিয়ে আইনি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এটা আটকাতে মিউটেশনের জন্যে পরচা থাকা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।’