হেমাভ সেনগুপ্ত ■ সিউড়ি
মেলা–খেলায় নস্টালজিক অতীত ফেরাচ্ছে সিউড়ি পুরসভা। এ বার সিউড়ি পুরসভার ১৫০ বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে বুধবার ম্যারাথনের মাধ্যমে শুরু হলো ‘সিউড়ি উৎসব’। সেই সঙ্গে রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য শতাব্দী প্রাচীন সিউড়ি বড়বাগান মেলাও পুরউদ্যোগে ফিরে এসেছে ‘সিউড়ি উৎসব’ হিসেবে। বুধবার সেই উৎসবেরই সূচনা হলো ম্যারাথনের মাধ্যমে। পাঁচ কিলোমিটার দৌড়লেন অংশগ্রহণকারীরা। এর আগে ১৯৮৪ সালে খটঙ্গা গ্রাম থেকে সিউড়ি শহর পর্যন্ত ম্যারাথন দৌড় হয়েছিল। তারপর আর কোনও ম্যারাথনের ইতিহাস নেই এই শহরে।
সিউড়ি বড়বাগান মেলার সূচনা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। ১৮৯৫ সালে বীরভূমের ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে এসেছিলেন ই জি ড্রেক ব্রোকম্যান। তিনি সিউড়িতে একটি পশু প্রদর্শনীর আয়োজনের উদ্দেশ্যে কৃষক এবং খামার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল কৃষি–শিল্প–পশুপালনের ক্ষেত্রে জেলার উন্নতি করা। কিন্তু প্রদর্শনী করতে পারেননি তিনি। তার আগেই ট্রান্সফার হয়ে যান।
এর পরে ১৮৯৭ সালে জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন এফ এস কালিয়া। তাঁর উদ্যোগেই প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন হয় জমিদার দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের ‘বড়বাগান’ নামে একটি বাগানে। এই প্রথম প্রদর্শনীর নাম ছিল ‘সিউড়ি গবাদি পশুর মেলা’। পরে বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন নামে ওই মেলা ও প্রদর্শনী বসতে শুরু করে। শেষপর্যন্ত নাম হয় বড়বাগান মেলা।
১৯৪০ সালে সিউড়ির বড়বাগান মেলার উদ্বোধনে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়াও এই মেলার উদ্বোধনে সিউড়িতে এসেছেন বাংলার বড়লাট লর্ড রোনাল্ডস ও লর্ড ব্রেবোর্ন। পা পড়েছে সিএফ অ্যান্ড্রুজ়, যদুনাথ সরকার, রমেশচন্দ্র মজুমদার, অন্নদাশঙ্কর রায়েরও। তবে বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে বন্ধ থেকেছে মেলা। পুরসভার উদ্যোগ শেষ বার মেলা বসেছিল ১৯৭০ সালে। কিন্তু তার পর আর পুরউদ্যোগে মেলা হয়নি।
একসময়ে যে জায়গায় এই বড়বাগান মেলা বসত, তার পাশেই পরবর্তী কালে সিউড়ি সেচ দপ্তরের কলোনি তৈরি হয়। সেই সেচ কলোনির মাঠেই ২০২৪ সালে ফের পুরসভার উদ্যোগে মেলার আয়োজন করা হয়। নাম দেওয়া হয় সিউড়ি উৎসব। নতুন বছরে সেই সিউড়ি উৎসবই হচ্ছে অনেক বড় ক্যানভাসে। শুরু হয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যের খোঁজ।
নস্টালজিক শহরের প্রবীণ মানুষরা। শহরের বাসিন্দা ইতিহাসবিদ পার্থ শঙ্খ মজুমদার বলেন, ‘রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য বড়বাগান মেলা বহু প্রাচীন। আজ তা সিউড়ি উৎসবের রূপ নিয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান–বিনোদনের পাশাপাশি বীরভূম জেলার প্রাচীন শিল্প, ইতিহাস, সংস্কৃতি স্থান পাক এই মেলায়, এটাই আমরা চাই।’
‘সিউড়ি উৎসবের’ সূচনায় ম্যারাথনে এ দিন ১৫১ জন অংশ নেন। ম্যারাথন নিয়ে নস্টালজিক সিউড়ির বাসিন্দারা। ১৯৮৪ সালে ম্যারাথনে দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর সাউ। তিনি বলেন, ‘সেই ম্যারাথনের জন্য শহর জুড়ে সে কী উন্মাদনা! শয়ে শয়ে ছেলেমেয়ে দৌড়েছিল। ফের সিউড়িতে পুরসভার উদ্যোগে সেই ম্যারাথন ফিরে এল, সত্যিই আনন্দ হচ্ছে।’
সিউড়ি পুরসভার কাউন্সিলর কুন্দন দে বলেন, ‘শহরের মানুষের ম্যারাথন নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, তা সত্যিই দেখার মতো। দীর্ঘ দিন পরে প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরে পেয়ে আমরাও আপ্লুত।’ সিউড়ি উৎসবের জন্য সিউড়ি পুরসভার উদ্যোগ ও বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শহরবাসী। পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘শতাব্দী প্রাচীন বড়বাগান মেলার নবকলেবর ‘সিউড়ি উৎসব’। যে উৎসব ঘিরে নস্টালজিক সিউড়ির আম–আদমি। আমরা প্রাচীন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দিতে চাই সিউড়ি পুরসভার সার্ধশতবর্ষের প্রাক্কালে।’