এই সময়, কাকদ্বীপ: কখনও চলেছে উলঙ্গ করে মারধর। আবার কখনও মোটা মোটা লাঠি ভেঙেছে তাঁদের শরীরে। আড়াই মাস পরেও সেই দগদগে দাগ রয়েছে গায়ে। এমনই সব অভিজ্ঞতার কথা জানালেন বাংলাদেশ থেকে ফেরা ২২ জন মৎস্যজীবী।
সোমবার গঙ্গাসাগরের মঞ্চ থেকে বাংলাদেশ জেলে আটক কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন কাকদ্বীপের বিধায়ককে নির্দেশ দিয়েছিলেন অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। সেই নির্দেশ মেনে বুধবার বেলায় কাকদ্বীপ সুপার মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অসুস্থ মৎস্যজীবীদের।
এ দিন মৎস্যজীবী যাদব বসাক বলেন, ‘১৬ অক্টোবরের আমাদের ট্রলারে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা যায়। ভাসতে ভাসতে আমাদের ট্রলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলসীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশের জল সীমানায় ঢুকে পড়ে। তখনই বাংলাদেশের নৌবাহিনী এসে আমাদের ট্রলারে জাহাজ দিয়ে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। ওদের পরিকল্পনা ছিল আমাদের গোটা ট্রলারকে উল্টে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখানে ডুবিয়ে আমাদের খুন করার।’
তবে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনার এবং কর্মীরা সাহায্য করেছেন বলে দাবি ভারতীয় মৎস্যজীবীদের। মৎস্যজীবী অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘ধরা পড়ার পর আমাদের জাহাজের মধ্যে তুলে নিয়ে গিয়ে উলঙ্গ করে হাত-পা, চোখ, মুখ বেঁধে রেখে বাংলাদেশের নৌ বাহিনী ব্যাপক মারধর করে।’ তাঁদের বাংলাদেশের বাঘেরহাট জেলে রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশের নৌবাহিনীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পাশের ট্রলারের পাঁচজন মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে ঝাঁপ দেন। চারজনকে উদ্ধার করতে দিলেও বাকি একজন মৎস্যজীবীকে বাংলাদেশের নৌবাহিনী কোনও ভাবে উদ্ধার করতে দেয়নি বলে অভিযোগ। সবার চোখের সামনে গুণমণি দাস সমুদ্রের ঢেউয়ে তলিয়ে যায়।
কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘২২ জন মৎস্যজীবী চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁদের আঘাতের জায়গাগুলো দেখে মনে হয়েছে প্রত্যেককে মোটা লাঠি দিয়ে বেধড়ক ভাবে মারধর করা হয়েছিল। আড়াই মাস কেটে গেলেও আঘাতের জায়গাগুলো ইন্টার্নাল হেমারেজ রয়েছে।’ গুণমণির স্ত্রী পুতুল দাসের কাছে পৌঁছয় তাঁর জামা। তা জড়িয়ে চোখে জল নিয়ে পুতুল বলেন, ‘বাংলাদেশের নৌ বাহিনী যদি অত্যাচার না করত, তা হলে হয়তো আমার স্বামী বেঁচে ফিরতেন।’