টানা আট থেকে ন’ঘণ্টা গলদঘর্ম ডিউটি। অবসর সময়ে রামপুরহাটের শিবায়নকে পাওয়া যায় এক অন্য জগতে। কখনও দুঃস্থদের হাতে তুলে দিয়ে আসছেন সামর্থ্য অনুযায়ী খাবার, কখনও ক্যান্সার আক্রান্তদের সঙ্গে মজে রয়েছেন জমাটি আড্ডায়। আবার কখনও অসহায় শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মুখে হাসি ফোটানো গিফট।
রামপুরহাট ট্রাফিকে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত শিবায়ন ভট্টাচার্য। বাড়ি রামপুরহাট থানার কুসুম্বা গ্রামে। জীবে প্রেম করার বাসনা নিয়ে ছুটে যান অসহায়দের কাছে। এটাই তাঁর নেশা। শিবায়নের কথায়, ‘আমার কাছে ঈশ্বর মানে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। তাই দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণেই আমি মানুষের সেবা করছি।’
তবে অন্যকে সাহায্যের জন্য নিজেরও তো কিছু অর্থ সংস্থান দরকার। সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করে যা জোটে তা দিয়ে কোনওরকমে মা-ছেলের সংসার চলে। শিবায়ন বলেন, ‘যে টাকা বেতন পাই, তার অন্তত ৪০ শতাংশ বাঁচানোর চেষ্টা করি অসহায়দের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য।’ পাশাপাশি পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে হাত পেতে সাহায্য চেয়ে নেন সর্বহারা মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।
ডিউটি শেষে বিভিন্ন সময়ে পৌঁছে যান এলাকারই ক্যান্সার আক্রান্তদের কাছে। মারণ রোগে আক্রান্তরা যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, তার জন্যেই পাশে গিয়ে দাঁড়ান তাঁদের। তবে একা কত জনকে সাহায্য করবেন? শিবায়ন হেসে বলেন, ‘শুরুটা আমি একা করেছিলাম। এখন অনেককেই পাশে পেয়েছি। আশা করব আমার মতোই ডিপার্টমেন্টের প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্য মতো দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াবেন।’
ছেলের কাজে গর্বিত মা। শিবায়নের মা শিপ্রা ভট্টাচার্য বলেন, ‘যখন ওর বয়স ১১ বছর তখন থেকেই দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ানো ওর নেশা। কখনও বাইরে বেরিয়ে নিজের জামা খুলে কোনও দুঃস্থ ছেলেকে দিয়ে চলে আসত। আবার কখনও বাড়ি থেকে চাল, ডাল, বিভিন্ন সবজি নিয়ে দিয়ে আসত। সিভিকের কাজ পাওয়ার আগে যখন ক্যাটারিং-এর কাজ করত, তখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাড়ির বেঁচে যাওয়া খাবার নিয়ে এসে পৌঁছে দিত অসহায়দের কাছে। সেই কাজ আজও করে চলেছে।’
শিবায়নের কাজ সহকর্মীদেরও অনুপ্রেরণা দেয়। ডিএসপি ট্রাফিক কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন , ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা অসামান্য একটা কাজ। এতটুকু বেতন পেয়েও এরকম একটা কাজ করছে, তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমি বা আমরা চেষ্টা করব ওঁর পাশে থেকে আরও মানুষের কাছে যেন সাহায্যটা পৌঁছে দিতে পারি।’