• তিনশো থেকে কমে বাড়ির সংখ্যা এখন ৬০, কংসাবতী গিলছে মেদিনীপুরের চাঁদড়া, কঙ্কাবতী
    বর্তমান | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া, মণিদহ, কঙ্কাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রামের বাসিন্দা তাঁদের ভিটেমাটি থেকে শুরু করে কৃষিজমি হারিয়েছেন কংসাবতীর ভাঙনে। শীত ফুরোলেই ফের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলি ফিরে আসার আতঙ্কে তাঁরা চাইছেন শীত থাকতেই কংসাবতীর ভাঙন নিয়ে পদক্ষেপ করুক প্রশাসন। তাঁদের কথায়, নদী ভাঙনের জেরে  নিঃস্ব হয়েছে বহু মানুষ। বেশকিছু গ্রামের ৯০ শতাংশ জমি চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে চাষের। চাষযোগ্য জমি নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় কর্মহারা হয়েছেন বহু চাষি। তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন বিধায়ক সুজয় হাজরা। এদিন মেদিনীপুরের বিধায়ক বলেন, নদী ভাঙন অনেক বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ইতিমধ্যেই সেচদপ্তরকে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা এলাকা পরিদর্শন করবেন। আমরাও চাইছি, দীর্ঘদিনের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক। 


    এদিন নদীর ধারে দাঁড়িয়েছিলেন চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ধজিধরা গ্রামের বাসিন্দা কমলা রানা। এই গ্রামে ৩০০টির বেশি বাড়ি ছিল। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৬০টি রয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামের বেশিরভাগ অংশ চলে গিয়েছে নদীতে। বর্ষায় ব্যাপক নদী ভাঙন হওয়ায় চাষের জমি ছাড়াও অসংখ্য বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। বিধায়ক আশ্বাস দিয়েছেন। এবার হয়তো কাজ হবে। না হলে গ্রামের পর গ্রাম শেষ হয়ে যাবে। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে চাঁদড়া, মণিদহ, কঙ্কাবতী গ্রাম পঞ্চায়েত। এইসব পঞ্চায়েতগুলির নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের মূল সমস্যা নদী ভাঙন। নদী ভাঙনের জেরে শতাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। শুধু চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরডাঙা এলাকায় চারশো বিঘা জমি চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। এদিন উত্তরডাঙা এলাকায় নদীর ধারে বসেছিলেন রামজয় পাল। তিনি বলেন, নদী মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই এলাকার মানুষ আতঙ্ককে সঙ্গী করেই বেঁচে থাকে। বর্ষায় বিঘার পর বিঘা জমি চলে যায় নদীতে। একটা বড় বাঁধ তৈরি হলে এই সমস্যার সমাধান হবে। ভাঙনের সময়ে মানুষের ভরসা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। বহু মানুষের বাড়ি নদী ভাঙনের জেরে তলিয়ে যাওয়ায় তাঁরা কেউ ভাড়া বাড়ি, কেউ  ত্রিপলের অস্থায়ী বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন। 


    স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, আগে বহু বিধায়ক কথা দিয়েও কথা রাখেননি। ভোট মিটলেই আমাদের ভুলে যেতেন জন প্রতিনিধিরা। সুজয়বাবুর উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। বহু মানুষ সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু জমি থাকলে তবে তো বাড়ি তৈরি হবে। গত বছরেও ধজিধরা গ্রামের দু›টি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে। নদীতে সব ভেসে যাওয়ায় পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে অনেকে। 


    (কংসাবতীর ভাঙন।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)