• সীমিত পরিকাঠামো নিয়েই জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য, সুস্থ প্রসূতি, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের মুকুটে নতুন পালক  
    বর্তমান | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ফের রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে জটিল সমস্যার সফল অস্ত্রোপচার। এবার লাইগেশন ল্যাপারোস্কপির সাহায্যে একটোপিক প্রেগন্যান্সির অস্ত্রোপচারটি করা হয় সেখানে। মহকুমা হাসপাতালের দুর্বল পরিকাঠামোতেও একের পর এক সফল অপারেশন করে কার্যত প্রশংসার শিখরে পৌঁছেছে হাসপাতালটি। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন খোদ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাসও।


    রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগিনীর নাম ঝুমা মণ্ডল। নওপাড়া-মাসুন্দা পঞ্চায়েত এলাকার বেলেআটি পাড়ার বাসিন্দা। পরিবারের সদস্য বলতে স্বামী প্রকাশ মণ্ডল এবং ১১ বছরের একটি কন্যা। স্বামী পেশায় দিনমজুর। গত রবিবার পরিবারের কাজ সারতে সারতে হঠাৎ পেটে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। প্রথমে সাধারণ পেটে ব্যথা ভেবে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সোমবার সকালে যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিবারের তরফে তখনই ঝুমাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় রানাঘাট ১ ব্লক হাসপাতালে। কিন্তু পরিস্থিতি খারাপ বুঝে বিকেলেই তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে। তলপেটে ব্যথা নিয়ে আসা ওই মহিলার প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে পজিটিভ পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে জানা যায়, স্বাভাবিক গর্ভধারণ হয়নি তাঁর। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ওই যুবতীর গর্ভাবস্থাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে একটোপিক প্রেগনেন্সি। অর্থাৎ জরায়ুর বাইরে ফিটাসের উপস্থিতি। পরিস্থিতি খারাপ বুঝে সোমবার রাতেই অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের সার্জেন অভিরূপ নস্করের তত্ত্বাবধানে রাত প্রায় ১১টার সময়ে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। তবে বড় কাটাকুটির পরিবর্তে ল্যাপারোস্কপি, বলা ভালো লাইগেশন ল্যাপারোস্কপির সাহায্যেই জটিল এই অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক অভিরূপ নস্কর। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এই অস্ত্রোপচার। রোগিনীর পেটে মাত্র ৩টি ছিদ্র করেই জটিল এই অস্ত্রোপচার সারেন চিকিৎসক ও তাঁর সহকর্মীরা। অভিরূপবাবু বলেন, জরায়ুতেই গর্ভধারণ স্বাভাবিক। তার বাইরে ফিটাস থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সেটা বিপদকে হাতছানি দেয়। যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছিল ওই মহিলার। তাই আমরা রাতেই অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিই। রোগী সুস্থ রয়েছেন। 


    এদিকে, বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী বলেন, সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট থাকুক এটাই আমরা চাই। প্রচুর গরিব মানুষ দূরদূরান্ত থেকে আসেন চিকিৎসা করাতে। চাইলেই এই ধরনের রোগী রেফার করে দেওয়া যায়। কিন্তু তাতে রোগীর ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই হয় না। তাই আমরা সীমিত সামর্থের মধ্যেও চেষ্টা করি সর্বোচ্চ পরিষেবা দেওয়ার। সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক আমরা এমন অস্ত্রোপচার করতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য হাসপাতালকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নদীয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, রানাঘাট হাসপাতালের সাফল্য জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নত দিকটি তুলে ধরে। আশা করব ভবিষ্যতে এই জেলার রোগীদের আরও ভালো পরিষেবা দিতে পারব।
  • Link to this news (বর্তমান)