নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: নিজে অষ্টম শ্রেণি পাশ। দু’লাইন বাংলা লিখতে হাত কাঁপে। স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধির জোরে এমএ, এমএসসি, এমবিএ পাশদের বোকা বানিয়ে দিয়েছে মেমারির জামাই। তাদের চাকরির অফার দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তবে, শেষরক্ষা হয়নি। মেমারির জামাই সমীরণ মণ্ডলকে শ্রীঘরে যেতে হয়েছে। তার বাড়ি নদীয়ার তাহেরপুর থানা এলাকায়। তবে সে মেমারি থানা থেকে কিছুটা দূরে শ্বশুরবাড়িতে থাকত। সেখানে বসেই সে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, সমীরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ খুলে বিভিন্ন নামী সংস্থায় চাকরির আশ্বাস দিয়েছিল। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অফিসার পদেও নিয়োগ করা হবে বলে সে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। তার ফাঁদে পড়ে বহু উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতী। চাকরির জন্য সে প্রথমে একটি ফর্ম ফিলআপ করতে বলত। রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে ৪৫০টাকা করে নেওয়া হতো। পরে ধাপে ধাপে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। চাকরি পাওয়ার পর বাকি টাকা নেওয়া হবে বলে সে জানাত। সে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরে টাকা পাঠাতে বলত। যার অ্যাকাউন্ট সে ব্যবহার করেছিল তাকেও পুলিস গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতের নাম সুমিত রায়। সে কমিশনের বিনিময়ে অ্যাকাউন্ট ভাড়া দিয়েছিল।
এক পুলিস আধিকারিক বলেন, বিভিন্ন জেলার যুবক-যুবতীদের সে প্রতারণা করেছে। চাকরি হয়ে গেলে এক মাসের বেতন তাকে দিতে হবে বলে সে দাবি করেছিল। যদিও কেউই চাকরি পাননি। টাকা দেওয়ার পর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও চাকরি না পাওয়ায় এক যুবক অভিযোগ করেন। তারপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, কর্পোরেট সংস্থার আধিকারিকরা কীভাবে ইন্টারভিউ নেয় তা সে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করে রপ্ত করেছিল। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার জন্য ফর্ম ফিলাপ করানোর পাশাপাশি সে বিভিন্ন নথি চেয়ে নিত। সে একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে চাকরিপ্রার্থীদের ফোন করত। প্রথমে পুলিসের ধারণা ছিল, একটি গ্যাং এই প্রতারণা চক্রে জড়িত রয়েছে। তদন্তে নেমে পাঁচটি মোবাইল নম্বর পায় পুলিস। পরে দেখা যায়, সেই পাঁচটি সিমকার্ড সে ব্যবহার করত।
সে এলাকার এক বৃদ্ধর নম্বরও ব্যবহার করেছিল। পুলিস তাঁকেও জেরা করে। তিনি পুলিসকে জানিয়েছেন, তাঁর কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। সাধারণ ফোন ব্যবহার করেন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে জানেন না। অথচ তাঁর নম্বর ব্যবহার করে চাকরিপ্রার্থীদের হোয়াটঅ্যাপ কল করা হতো। পুলিস বৃদ্ধকে জেরা করে নিশ্চিত হন, তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর মোবাইলটি হাতিয়ে ওই প্রতারক হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছিল। সেই নম্বর দিয়ে সে অনেককে ফোন করেছে। মেমারির জামাই জেরায় জানিয়েছে, সে প্রায় দেড় বছর ধরে প্রতরণা চক্র চালাচ্ছে। বহু উচ্চশিক্ষিতের সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে।