সরকারি এসি বাসের বেহাল দশা, তীব্র ক্ষোভ যাত্রীমহলে
বর্তমান | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মানিকতলা সেতু থেকে নামছে এয়ারপোর্ট-হাওড়াগামী এসি বাস ‘ভিএস-২’। সামনে বসা এক যাত্রী আসন ছেড়ে উঠতেই অপর একজন যাত্রী বসলেন। নড়তে থাকল আসনটি। তারপর দেখা গেল, পিছনের দিকে লোহার রডের সঙ্গে গোটা আসন নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা। সেটা আলগা হয়ে পড়েছে। ফলে থেকে থেকেই নড়ে উঠছে। বাস কনডাক্টর তা আবার বেঁধে দিলেন। তা দেখে বাসের অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, ‘রাজ্য সরকারের গণ পরিবহণের অন্যতম ভরসা এসি বাস। সেগুলির এই হল বাস্তব অবস্থা। কোনও বাসের আসন নড়বড়ে। কোনও বাসের ছাদ থেকে জল পড়ে। গ্রীষ্মে অন্দরমহল ঠান্ডা করতেও সক্ষম নয় বহু বাস।’
শুধু ‘ভিএস ২’ নয়। ‘ভিএস ১’, এয়ারপোর্ট-হাওড়াগামী ‘এসি ৩৯’, বারাসত-গড়িয়া ‘এসি ৩৭’, কিংবা গড়িয়া-হাওড়া এসি ৫ ও ৬, এয়ারপোর্ট-টালিগঞ্জ রুটের ‘ভি ১’-এই তালিকা দীর্ঘ। অধিকাংশ এসি বাসেরই দশা বেহাল। অনেক বাসে ধরে দাঁড়ানোর ঝুলন্ত হাতলগুলি পর্যন্ত নেই। কোথাও সিট ভাঙা। কোনও বাসে নেই সিটের হাতল। অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, একাধিক বাসে গরমে ঠিকমতো কাজ করে না এসি। বৃষ্টি হলে জল পড়ে।
এয়ারপোর্ট-টালিগঞ্জগামী ভি ওয়ান বা এসি ১২ এবং এসি ৯ বাসের দশা তুলনামূলকভাবে ভালো বলে অনেকের বক্তব্য। উল্টোদিকে সবথেকে খারাপ দশা এয়ারপোর্ট-হাওড়া, বারাসত-গড়িয়া কিংবা গড়িয়া-হাওড়াগামী পুরনো মডেলের এসি ৫ ও ৬ নম্বর বাসগুলির। উল্টোডাঙা থেকে রোজ ভিএস ২ নম্বর বাসে যাতায়াত করেন তুষারকান্তি হালদার। বড়বাজারে তাঁর ব্যবসা। তিনি বলেন, ‘একটু আরামের জন্যই তো লোকে এসি বাসে চড়ে। ৩০-৪০ টাকা ভাড়া নেয়। কিন্তু দেখুন কী হাল! সিট ভাঙা। গরমে এসিতেও ঘাম হয়। রক্ষণাবেক্ষণ একেবারেই হয় না।’ হাতল বা রড থেকে নাটবল্টু চুরি গিয়েছে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
সম্প্রতি, বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন। যাত্রীদের বক্তব্য, ‘বাসের সংখ্যা বাড়ালেই শুধু হবে না। প্রয়োজন ভালো মানের বাসের। ভাঙা সিট, ভাঙা জানলা, এসি থেকে জল পড়ে, হাতল নেই-এমন বাস চললে মানুষকে সমস্যায় পড়তে হয়। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভাঙা বাসে কেন উঠবেন যাত্রীরা?’ রঘুনাথ পাইন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এয়ারপোর্ট থেকে যে এসি বাসগুলি বের হচ্ছে, সেখানে প্রতিদিন অন্য রাজ্য থেকে আসা নাগরিকরা ওঠেন। তাঁরা বাসের এই হাল দেখছেন। এতে সরকারের মুখ পুড়ছে।’ প্রয়োজনে বাসের ভাড়া বাড়ানোর পক্ষেও যুক্তি দিয়েছেন যাত্রীরা।