২০৮৩ সালে শেষ মেয়াদ! পাঁচ বছরের বিমা করে বিপাকে বৃদ্ধা
বর্তমান | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা : বিমা সংক্রান্ত একাধিক পাতা সম্বলিত ফর্ম অধিকাংশ সময় পুরোপুরি পড়েন না গ্রাহকরা। এজেন্ট বলে দেন, ফর্মের কোথায় কোথায় স্বাক্ষর করতে হবে। তা শুনে শুধুমাত্র পূরণ করে থাকে আমজনতা। ফর্মের বাকি অংশ এজেন্টই পূরণ করে দেন। কিন্তু ফর্মের ভিতর অতি ক্ষুদ্র হরফে লেখা কিছু কথা থাকে। সেগুলিই যে ফাঁদে ফেলতে পারে, তা অক্ষরে অক্ষরে টের পেলেন কলকাতার এক বাসিন্দা। বিমার সার্টিফিকেট আসার পর দেখলেন, ২০৮৩ সালে গিয়ে তাঁর পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। অবাক করা বিষয়টি জানার পর কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে সর্বত্র। অবশেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরে অভিযোগ জানিয়ে সুরাহা পেলেন কলকাতার ওই মহিলা।
কলকাতার এজেসি বোস রোড এলাকার বাসিন্দা মারিয়া টি ফার্নান্ডেজ। তিনি ষাটোর্ধ্ব প্রবীণ। বছর দু’য়েক আগে একটি নামি বেসরকারি বিমা সংস্থায় এক লক্ষ টাকার একটি পলিসি করিয়েছিলেন। তাঁকে ওই সংস্থার এক এজেন্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পলিসির পাঁচ বছরের মেয়াদে উত্তীর্ণ হবে। এজেন্টের কথার উপর ভরসা করে বিমা সংক্রান্ত ফর্মে স্বাক্ষর করে দেন মহিলা। ফর্ম আর খুঁটিয়ে পড়েননি। এবং ফর্মের ভিতর এত ছোট হরফে লেখা ছিল যে, তাঁর পড়তে অসুবিধাও হয়।
সেই ছোট, প্রায় অপাঠ্য হরফে লেখা বয়ানেই ঘটে গিয়েছে আশ্চর্য কাণ্ড! ফর্ম পূরণ করে জমা দেওয়ার পর মারিয়া টি ফার্নান্ডেজ সার্টিফিকেট পান। তাতে তিনি দেখেন ২০৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৮ তারিখ ওই পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। যা দেখেই চমকে যান তিনি। ১৪ দিনের মধ্যে বিমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত চান। কিন্তু প্রয়োজনীয় সাহায্য না পেয়ে শেষপর্যন্ত যোগাযোগ করেন রাজ্য সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের সঙ্গে। বিমা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ‘আমার বয়স ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে। এখন বিমা সংস্থা বলছে ২০৮৩ সালে গিয়ে টাকা পাব। এখন ২০২৫ সাল। ২০৮৩ আসতে ৫৮ বছর বাকি। ততদিন তো আমার বাঁচবার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাহলে কীভাবে বিমা সংস্থা ওই ধরনের পদক্ষেপ করল?’
অভিযোগ পাওয়ার পর উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের কলকাতা সেন্ট্রাল অফিস পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ডেকে পাঠানো হয় ওই সংস্থার কর্তাদের। উপভোক্তা দপ্তরের আধিকারিকদের বক্তব্য, ‘ওই বিমা সংস্থার কর্তারা দাবি করেন, গ্রাহকের উচিত ছিল ফর্মটি সঠিকভাবে পড়ে তারপর পূরণ ও স্বাক্ষর করা। এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণভাবে গ্রাহকই।’ কিন্তু উপভোক্তা দপ্তরের আধিকারিকরা বোঝান, সাধারণ মানুষকে ঠকানোর কোনও এক্তিয়ার বিমা সংস্থার নেই। অবাস্তব কথা কেন লেখা থাকবে? ষাটোর্ধ্ব মহিলার একটি বিমা পলিসির মেয়াদ ২০৮৩ সালে গিয়ে উত্তীর্ণ হবে, এটা বাস্তবের সঙ্গে মানানসই নয়। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ আলোচনার পর ওই বিমা সংস্থা সংশ্লিষ্ট এজেন্টের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় সারে। তবে শেষমেশ মেনে নেয়, কোথাও ভুল হয়েছে। পুরো টাকা গ্রাহককে ফেরত দেওয়া হবে। উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের কলকাতা সেন্ট্রালের আধিকারিক সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার ৩৬ দিনের মধ্যে আমরা সমাধান করেছি। মারিয়া টি ফার্নান্ডেজকে সব টাকা ফেরত দিয়েছে বিমা সংস্থা।’