সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি
১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশার জন্য ২০২৭ সালের আগে সেবক-রংপো রেল প্রকল্প শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের (ইরকন) প্রোজেক্ট ডিরেক্টর মহিন্দর সিং এ কথা জানান। ২০২৩ সালে সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং গত বছর অতিবৃষ্টির কারণে বারবার ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা বেহাল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কালিম্পং জেলা প্রশাসন ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ১০ টনের চেয়ে ভারী গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। তাতে কাজের গতি আরও মন্থর হয়েছে। রেল ব্রিজের ভারী গার্ডার বহন কিংবা রেলের লাইন নিয়ে যেতে ইরকন–কে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
মহিন্দর বলেন, ‘প্রকল্পের ১৪টি টানেলের মধ্যে ১২টি কাটা হয়ে গিয়েছে। দ্রুত প্রকল্প চালু করতে রেল লাইন পাতা দরকার। রেল ব্রিজগুলি তৈরি করা দরকার। কিন্তু সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যা পরিস্থিতি, তাতে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরের আগে এই কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে না।’
সেবক–রংপো রেল প্রকল্পটি প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। পাহাড়ি পথে ১৪টি টানেল তৈরি করে রেলপথ তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে দীর্ঘ টানেলের দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। সেতু তৈরি হচ্ছে ২২টি। তার মধ্যে কালীঝোরায় স্টিলের সেতু ইতিমধ্যে নিত্যযাত্রীদের নজরে পড়েছে। আরও একটি সেতু তৈরি হবে তিস্তা বাজার এলাকায়। ৮ ও ১০ নম্বর টানেল তৈরির কাজ চলছে। বাকিগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছে। পাঁচটি টানেলে রেলপথ তৈরির কাজ চলছে।
এত দিন এই সড়কের দেখভাল করত রাজ্য সরকারের পূর্ত দপ্তরের জাতীয় সড়ক বিভাগের ৯ নম্বর ডিভিশন। ইরকনের অভিযোগ, সড়ক বেহাল হয়েছে মূলত তিস্তা লাগোয়া অংশের পাহাড়ে ক্ষয়ের জন্য। সেই কারণে রাস্তায় বারবার ধস নামে। কিন্তু বেহাল অংশের মেরামতির বদলে পূর্ত দপ্তরের ৯ নম্বর ডিভিশনের কর্তারা পাহাড় কেটে রাস্তা চওড়া করার দিকে নজর দেন। এতে রাস্তা আরও ধসপ্রবণ হয়েছে। যেমন যান চলাচল ব্যাহত হয়, তেমনই রেলের সরঞ্জাম ট্রাকে চাপিয়ে বয়ে নিয়ে যেতেও সমস্যা হচ্ছে।
২০০৯ সালে সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের শিলান্যাসের সময় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে জমি জট এবং তার পরে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ২০১৮ সালে প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হয়। ঠিক ছিল ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ এবং লকডাউনের জন্য প্রকল্পের কাজ বেশ কয়েক মাস থমকে যায়।
পরে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয় ২০২৪ সালে। কিন্তু ২০২৩ সালে সিকিমে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে। ঠিক হয়, সিকিমের ভারতে অন্তর্ভুক্তির পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে ২০২৫ সালে কাজ শেষ করা হবে। সেখানেও বাধা হয়েছে গত বছরের অতিবৃষ্টি এবং দশ টনের চেয়ে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির দায়িত্ব পূর্ত দপ্তরের থেকে জাতীয় সড়ক পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের হাতে তুলে দেন। সংস্থার সূত্রের খবর, আপাতত ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির ব্যাপারে ডিপিআর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।