• হিসাবে গরমিল, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নিয়ে রাজ্যের হলফনামা তলব
    এই সময় | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • হিসাবটা মিলছে না কিছুতেই। গোলমালের শুরুটা সেখানেই। গোল শুরু হয়েছিল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ-খুনের পরে। খুনের সূত্র ধরেই উঠে আসে দুর্নীতির ঘটনাও। সেই দুর্নীতির একটা গুরুতর অভিযোগ ছিল বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যকে ঘিরে। অভিযোগ ছিল, আরজি করের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের একটা বড় অংশ পাচার হয়ে যেত।

    তার পরেই উঠে আসে যে, রাজ্যের বহু হাসপাতালেই চলছে এই কারবার। রাজ্যে হাসপাতাল-ক্লিনিকের যা সংখ্যা, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ ততটা নয়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট থেকেই এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ ছিল, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন নজরদারি নেই বলে এই ঘটনা ঘটছে। এ বার এ বিষয়ে রাজ্যের হলফনামা তলব করল জাতীয় পরিবেশ আদালত (এনজিটি)।

    হলফনামার মাধ্যমে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর, পরিবেশ দপ্তর এবং পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও। পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত বিষয়টি নিয়ে প্রথমে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। নজরদারির দাবিও তুলেছিলেন। এনজিটি-র পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চের বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য অরুণ কুমার ভার্মা নির্দেশ দিয়েছেন, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের মোট পরিমাণ এবং তার ব্যবস্থাপনা হলফনামার আকারে চার সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে হবে।

    রাজ্যে হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের সংখ্যা ৩২০৯টি। সেগুলিতে মোট শয্যার সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৩২৩। বাংলায় ক্লিনিক এবং ডিসপেনসারির সংখ্যা ৬৭১৮। কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর রিপোর্ট থেকে এই সংখ্যা পাওয়া গিয়েছে। সেই হিসাবে সব মিলিয়ে রাজ্যে দৈনিক গড়ে ৪৩ হাজার ১২০ কেজি বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। গত বছরের ২৪ জুলাই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এই রিপোর্ট পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে।

    অভিযোগ, বর্তমানে শয্যার সংখ্যা আরও বেড়েছে। সরকারি অডিট অনুযায়ী শয্যা প্রতি দৈনিক ২৩০ গ্রাম বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল-নার্সিংহোম এবং ক্লিনিকের বাইরেও রাজ্যে অসংখ্য স্বাস্থ্য শিবির, রক্তদান শিবির, ব্লাড ব্যাঙ্কেও বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হয়। সেগুলি হিসাবের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অভিযোগ, শয্যা সংখ্যার সঙ্গে মেডিক্যাল বর্জ্যের বিপুল ফারাক। আশঙ্কা, সেগুলি হয় বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, না হলে হাত ঘুরে সেগুলি ফের ব্যবহার করা হচ্ছে।

    ২০২১ সালের মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী এই বর্জ্য নষ্ট করার কথা। অভিযোগ, তা হচ্ছে না। কারণ রাজ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলেই কিছু নেই। বর্জ্য নষ্ট হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কোনও কমিটিও এখনও তৈরি হয়নি। অথচ, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন ২০১৮–তে বলা হয়েছিল, মেডিক্যাল বর্জ্য পৃথকীকরণ খুব জরুরি।

    ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, গজ–ব্যান্ডেজ এবং ব্যবহৃত গ্লাভস আলাদা ভাবে রাখতে। এগুলির ব্যবস্থাপনা ভিন্ন। আইন অনুযায়ী প্লাস্টিক বা ফাইবার–পলিমার এবং রাবার জাতীয় জিনিসপত্র নাইট্রিক অ্যাসিড ঢেলে এবং কিছু বর্জ্যকে আবার অতি উচ্চতাপে নষ্ট করে ফেলতে হবে। সুভাষ দত্তের অভিযোগ, বেশ কিছু নার্সিংহোম এবং হাসপাতালের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য অন্য বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)