প্রবীর কুণ্ডু, কোচবিহার ( তুফানগঞ্জ)
‘যেতে নাহি দিব।’ চোখের জল মুছে ছোট্ট ছোট্ট হাত উঁচিয়ে ‘মানছি না, মানব না’ স্লোগানে সরব হল খুদে পড়ুয়ারা৷ একসঙ্গে স্কুলের তিন শিক্ষকের অন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষক হয়ে বদলির প্রতিবাদে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা আন্দোলনে নামে বৃহস্পতিবার৷
এই ঘটনা তুফানগঞ্জের নাগুরহাট কার্জিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। স্কুলের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখায় প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী প্রীতি রায় জানিয়েছে, এ ভাবে একসঙ্গে তিন জন শিক্ষক অন্য স্কুলে বদলি হয়ে গেলে তাদের পড়াশোনার অসুবিধা হবে। স্কুলের স্বার্থে এই বদলি রুখতে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে আবেদন জানিয়েছে খুদে আন্দোলনকারীরা।
জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জের শালবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের নাগুরহাট কার্জিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ছাত্রছাত্রী ২০৮। এত দিন এই স্কুলে শিক্ষক ছিলেন পাঁচ জন। তবে স্কুলের ইনচার্জ শিক্ষক–সহ আরও দুই শিক্ষক অন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন। এই স্কুল থেকে অব্যাহতি নিতে গিয়েই খুদে পড়ুয়াদের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁদের।
স্কুলের ইনচার্জ নীতিকুমার সাহা রায় বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশিকা মেনেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্কুলের তিন জন দায়িত্ব নিয়েছেন। যে হেতু বহু বছর থেকে এই স্কুলে শিক্ষাকতা করছেন ওঁরা, তাই মনের টানে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করেছে।’ স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সমীর গুহ জানান, খুদে পড়ুয়াদের আন্দোলনের কথা শুনে তিনি স্কুলে এসেছেন। শিক্ষকদের বদলির ঠেকাতে তাঁকে স্মারকলিপি পর্যন্ত দিয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এ দিকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জেরে বিভিন্ন স্কুলগুলিতে কমতে শুরু করেছে শিক্ষক সংখ্যা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোচবিহার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ৷ ইতিমধ্যে সিনিয়র শিক্ষকরা চাকরি জীবনের বয়সের নিরিখে বিভিন্ন স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন৷ চলতি সপ্তাহে জেলাজুড়ে সব সার্কেলগুলি থেকে নিয়োগপত্র হাতে নিয়ে নিজের স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে যোগ দিচ্ছেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১৮৫৩টি। প্রধান শিক্ষক, স্কুল ইনচার্জ ও সহকারী শিক্ষক–সহ ৬৮৮৬ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন এই জেলায়৷ এর মধ্যে ১১০৬টি প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ছিল৷ জানা গিয়েছে, এই শূন্যপদের জন্য ১৬২৪ জন প্রাথমিক শিক্ষক আবেদন জানিয়েছেন। এই শূন্যপদ পূরণে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে।