এই সময়, আসানসোল: পাথর খাদানে কাজ করা চার শ্রমিকের একসঙ্গে সিলিকোসিস ধরা পড়ল। বুধবার পশ্চিম বর্ধমানে রাজ্য শ্রম দপ্তরের অধীন সিলিকোসিস ডায়াগনস্টিক বোর্ডের বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন পাঁচ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে চার জনই ফুসফুসের এই জটিল রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মহম্মদ ইউনুস খান।
তিনি বলেন, ‘এ দিন বোর্ডের বৈঠকে সালানপুরের পাঁচ জন শ্রমিক উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের চার জন শ্রমিকের শরীরেই সিলিকোসিস রোগের প্রমাণ মিলেছে। এঁরা এই ব্লকের বিভিন্ন পাথর খাদান ও কারখানায় কাজ করেন।’ যোগ করেন, ‘প্রাথমিক ভাবে যাবতীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ধরে নেওয়া হচ্ছে, এই ব্লকের বরাভুই গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ রায় ও সুবল রায়ের মৃত্যু সিলিকাসিসেই হয়েছে। এঁদের ক্ষেত্রেও সরকারি সুবিধার জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে শ্রম দপ্তরে সুপারিশ করা হবে। সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ওই দপ্তর।’
এ দিন কুলটি ও জামুড়িয়ার আরও আট শ্রমিককে বোর্ডের সামনে হাজির করানো হয়। আরও একবার ওই শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সালানপুর ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় পাথর গুঁড়ো করার অন্তত ১০টি কারখানা রয়েছে। সিলিকোসিসের মতো মারণরোগের প্রকোপ যে সালানপুরে বাড়ছে তা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় জানিয়ে এসেছিলেন এই ব্লকের রামডির বাসিন্দা শিক্ষক অমরনাথ মাহাতো। তিনি জানিয়েছিলেন, এই ব্লকের পাথর কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সিলিকোসিস রোগ দেখা যাচ্ছে, যার জেরে মৃত্যুও ঘটছে।
অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই শ্রমিকদের টিবি রোগী বলে চিহ্নিত করে দেওয়া হচ্ছে। বরাভুই গ্রামে মৃত জগন্নাথ রায় ও সুবল রায়ের রোগ নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি চিঠি লেখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে। তাঁর চিঠির ভিত্তিতে কমিশনের পক্ষ থেকে পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে আট সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করা হয়। কয়েকদিন আগে ওই গ্রামে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি শিবির করা হয়।
সেখানে ৩২ জন শ্রমিককে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ২০ জনের শরীরেই সিলিকোসিস রয়েছে। ওই ২০ জনের মধ্যে ৬ জনকে পাঠানো হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। তবে ওই ৬ জনের মধ্যে আক্রান্ত এক জন বোর্ডের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বাকি পাঁচ জনের মধ্যে চার জনেরই শরীরে মিলেছে সিলিকোসিসের উপস্থিতি।
২০২৩–এর ২৭ জুন রাজ্যের তরফে সর্বশেষ ঘোষণায় জীবিত থাকাকালীন এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য দু’লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সিলিকোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে পেনশন পাবেন। রোগীর মৃত্যু হলে তাঁর পোষ্য প্রতি মাসে পেনশন পাবেন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
আক্রান্তদের সম্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই ঘোষণায়। সিলিকোসিসে আক্রান্তদের বোর্ডের তরফ থেকে দেওয়া হবে পরিচয়পত্র। সালানপুরের ওই চার রোগীকেও পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। আক্রান্ত রোগী মারা গেলে পাওয়া যাবে আরও দু’লাখ টাকা।