এই সময়, কালনা: হাজার সমস্যায় জর্জরিত হস্তচালিত তাঁতশিল্পীদের এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা। সেখান থেকে পড়শি রাজ্য অসমের জনপ্রিয় মেখলা শাড়ি বুনে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কালনার তাঁতশিল্পীরা। মিলছে ভালো মজুরি। নানা সুবিধা থাকায় তাঁতশিল্পীদের মধ্যে বাড়ছে এই শাড়ি বোনার প্রবণতাও। নাদনঘাটের মধ্যশ্রীরামপুরের কয়েকজন তাঁতি এই শাড়ি বুনে নিয়মিত পাঠাচ্ছেন অসমে।
পাওয়ারলুম, র্যাপিয়ার মেশিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেন না কালনা মহকুমার হস্তচালিত তাঁতিরা। বিক্রিও কমেছে। ধাত্রীগ্রাম ও শ্রীরামপুরে দু’টি সরকারি হাট গড়ে তোলার পাশাপাশি নানা ভাবে তাঁতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। কিন্তু তাতেও সঙ্কট কাটছে না। একমাত্র বাজার মিললে সঙ্কট কাটবে বলে বুঝতে পেরেছেন তাঁতিরা।
এ বার সেই ভাবনায় প্রথাগত বাংলার তাঁতের শাড়ির বদলে কয়েকজন তাঁতি বুনতে শুরু করেছেন অসমের মেখলা শাড়ি। সেই শাড়ি তৈরি হলে ট্রান্সপোর্টে অসমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তাঁতিরা। অসমের তুলনায় এখানে শাড়ি বুনতে মজুরি অপেক্ষাকৃত কম লাগায় লাভবান হচ্ছেন ওই রাজ্যের ব্যবসায়ীরাও।
মধ্য শ্রীরামপুরের তাঁতি দীনবন্ধু বসাক বলেন, ‘আমরা যে তাঁতের শাড়ি বুনি তার বাজার খারাপ। একটি শাড়ি বুনে বর্তমানে ১৫০ টাকা মজুরিও মিলছে না। পরিচিত এক জনের মাধ্যমে অসমের মেখলা শাড়ি বোনার বরাত পাই। তার পর থেকে এই শাড়িই বুনছি। এলাকার অনেকেই এখন এই শাড়ি বুনছেন।’
তপন বসাক নামে এক তাঁতি বলেন, ‘আমরা যে শাড়ি বুনি তা ১২ হাতের। কিন্তু অসমের মেখলা শাড়ি ১০ হাতের। তার মধ্যে দু’হাত ব্লাউজ পিস। এখানকার শাড়ির বহর ৫০ ইঞ্চির মতো। মেখলা শাড়ির বহর ৪০ ইঞ্চি।’
তাঁতিরা একটি মেখলা শাড়ি বুনে পাচ্ছেন সাড়ে তিনশো টাকার মতো। ১৫ হাতের মেখলা শাড়ি বুনলে মজুরি ৫০০ টাকা। দ্রুত গতিতে হাত চলে এমন এক জন তাঁতি ৮–৯ ঘণ্টায় বানিয়ে ফেলবেন ১০ হাতের একটি মেখলা শাড়ি। শিবু বসাক নামে এক তাঁতির বক্তব্য, ‘বাংলার তাঁতের মতোই বুনতে হয়, তাই অসুবিধা হচ্ছে না। সুতোটাও একটু মোটা। মহাজন সুতো দিয়ে দেয়। একটি শাড়ি বুনতে গেলে বহু রকমের কাজের জন্য লোক লাগে। তাই অনেকেই কাজ পাচ্ছেন। অসমে শাড়ি বুনতে যা মজুরি লাগে এখানে মজুরি তার থেকে কম। ফলে আমাদের অর্ডার বাড়ছে।’
সমুদ্রগড়ের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত তাঁতশিল্পী সুরেশ বসাক বলেন, ‘মেখলা শাড়ি বুনে বহু তাঁতিই ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন। কালনার তাঁতিদের কাছে এটা আশার আলো।’