এই সময়, চাঁপদানি: পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে তিনজনকে গ্রেপ্তার করল চন্দননগর কমিশনারেটের পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন অস্থায়ী ট্র্যাফিক হোমগার্ড। বৃহস্পতিবার ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশ মহম্মদ ইমরান, মোহন সাউ ও বিশ্বজিৎ ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ইমরান ট্র্যাফিক হোমগার্ড। দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার মৌসুনি দ্বীপ থেকে মোহন সাউ, তারকেশ্বর থেকে বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং চাঁপদানি থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্তদের এ দিন চন্দননগর আদালতে তোলা হলে বিচারক দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
চন্দননগর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা নকল নথি জমা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে দিত। একই আধার নম্বর দিয়ে বার বার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হচ্ছিল। কিন্তু পাসপোর্টের নথি যাচাইয়ে থাকা পুলিশকর্মীদের সন্দেহ হওয়ায় পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া স্থাগিত করে দেন।
তার পরেই গত নভেম্বর মাসে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সর্ষের মধ্যেই ভূত। আধার কার্ড, জন্মের সার্টিফিকেট, ভোটার আই কার্ড ইত্যাদির নকল নথি কাজে লাগিয়েই পাসপোর্টের জালিয়াতি চক্র চালানো হতো। জালিয়াতরা কায়দা করে ১৬ সংখ্যার একই আধার নম্বর ব্যবহার করে নাম ও ঠিকানা বদলে দিত। একই আধার নম্বর ব্যবহার করে একাধিক ব্যক্তির আধার কার্ডের নথি সামনে আসতেই চোখ কপালে ওঠে পুলিশের।
চাঁপদানির ১৯ নম্বর ওয়ার্ড পিবিএম বাই লেনে বাড়ি মহম্মদ ইমরানের। সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে চন্দননগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে বেশ কিছুদিন কাজ করেন তিনি। তার পর গত চার বছর ধরে চন্দননগর পুলিশের অস্থায়ী হোমগার্ড পদে কাজ করছিলেন। বর্তমানে চন্দননগর পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন ইমরান। বুধবারও ডিউটি করে বাড়ি ফেরেন তিনি। রাতেই চাঁপদানির নুরি লেনের বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। যদিও আদালতে যাওয়ার পথে ইমরান দাবি করেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।
ধৃত ইমরানের পরিবারের দাবি, পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদনের ফর্ম প্রিন্ট করে দিতেন তিনি। তাঁর খুড়তুতো দাদা মহম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘ইমরান ১০০ টাকা নিয়ে ফর্ম ফিলআপ করে দিত। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশানের অফিসাররা যা করার করেছে।’ ভাই নির্দোষ বলে দাবি করে ইমরানের দাদা মহম্মদ রিজুয়ান বলেন, ‘পুলিশ বাড়িতে এসে ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করেছে। আমার ভাই কিছু করেনি।’
এ বিষয়ে চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অমিত পণ্ডিত জাভালগি বলেন, ‘গত নভেম্বর মাসে আধার কার্ড নিয়ে একটি অভিযোগ আসে পুলিশের কাছে। তার পরেই ভদ্রেশ্বর থানায় পুলিশ সুয়োমোটো মামলা করে তদন্ত শুরু করে। এই ঘটনায় একই আধার নম্বর ব্যবহার করে নকল নথি তৈরি করা হতো।
প্রাথমিক ভাবে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ চন্দননগর আদালতের সরকারি আইনজীবী রীতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ধৃতরা পাসপোর্ট জালিয়াতিতে যুক্ত। মূলত জন্মের শংসাপত্র, আধার কার্ড ব্যবহার করত। তাই অভিযুক্তদের জামিনের বিরোধিতা করা হয়েছে।’
কমিশনারেট ছাড়াও হুগলি গ্রামীণ পুলিশ এলাকার সিঙ্গুর থেকে কয়েক দিন আগে জাল পাসপোর্ট কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে বর্ধমান থানার পুলিশ।