• মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতি মৃত্যুর নেপথ্যে ব্ল্যাক লিস্টেড সংস্থার স্যালাইন, চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট জমা স্বাস্থ্য ভবনে
    এই সময় | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় শিলিগুড়ির ফার্মা সংস্থা ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর সরবরাহ করা ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ (স্যালাইন)-এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দায়ী, স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর এমনটাই। এর আগে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালেও ওই সংস্থার তৈরি রিঙ্গার ল্যাকটেট নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে গত ১০ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

    চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে। সিজ়ারের পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৫ প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে শুক্রবার ভোররাতে মৃত্যুও হয় ১ জনের। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তড়িঘড়ি। 

    আপাতত সমস্ত সরকারি হাসপাতালকে ওই সংস্থার তৈরি নির্দিষ্ট ব্যাচ নম্বরের রিঙ্গার ল্যাকটেট-সহ মোট ১৪ ধরনের ওষুধ ও স্যালাইনের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। বিস্তারিত তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর এবং ড্রাগ কন্ট্রোল থেকে গঠিত হয়েছে দু’টি পৃথক তদন্ত কমিটি।

    গত বছর নভেম্বর মাসে কর্নাটকের বল্লারি জেলা হাসপাতালে চার প্রসূতির সিজ়ারের পর মৃত্যুর ঘটনার তদন্তেও উঠে এসেছিলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর নাম। ওই হাসপাতালে ‘রিঙ্গার ল্যাকটেট’ সরবরাহ করত পশ্চিমবঙ্গের এই সংস্থা। বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেল করায় গত মাসেই কর্নাটক সরকার কালো তালিকাভুক্ত করেছিল শিলিগুড়ির এই ফার্মা সংস্থাকে। 

    এ বার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাতেও ওই সংস্থার তৈরি করা রিঙ্গার ল্যাকটেটের বিরূপ প্রতিক্রিয়াই দায়ী, স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে এমনটাই। উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালস’-এর যে ১৪ ধরনের ওষুধের  ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর, তা কর্নাটক সরকারের স্ক্যানারেও ছিল।  সূত্রের খবর, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের শিলিগুড়ির অফিস পরিদর্শন করে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনের একটি প্রতিনিধি দলও। সূত্রের খবর, সম্প্রতি ফার্মা সংস্থার একাধিক জিনিস ব্যবস্থার  নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বুধবার ৬ জানুয়ারি রাতে সিজ়ার হওয়া ৫ জন প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের স্থানান্তরিত করা হয় ICU-তে।  শুক্রবার ভোরে মামনি রুইদাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। তাঁর বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকায়। মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের দিকেই অভিযোগ তুলেছিলেন প্রসূতির পরিবারের সদস্যরা। এরপরেই ঘটনার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে এই তথ্য। 



    এই প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী অবশ্য বলেন, ‘ড্রাগ কন্ট্রোল নমুনা সংগ্রহ করেছে। কোথা থেকে কী হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

    মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত রাউত অবশ্য বলেন, ওই প্রসূতিদের চিকিৎসায় কী কী ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল তা জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনকে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। উল্লেখ্য,  শুক্রবার ভোরেই কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে বাকি ৪ অসুস্থ প্রসূতিকে। 



    (তথ্য সহায়তা অনির্বাণ ঘোষ, মণিরাজ ঘোষ)

  • Link to this news (এই সময়)