• গঙ্গাস্নান সেরে ফিরেই অঘটন, ভাগ্যের পরিহাসে শিকলে বাধা সেলিমের জীবনের ২৪ বছর...
    আজকাল | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: গঙ্গা থেকে স্নান সেরে ফিরে দুর্ঘটনাবশত মাথায় আঘাত। সেখান থেকে স্মৃতিশক্তি লোপ। তারপর থেকে ২৪ বছর লোহার শিকলে বন্দি মুর সেলিম। নদিয়ার শান্তিপুর থানার গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের টেংরিডাঙ্গা মেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা মুর। ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালই ছিল। হঠাৎ করেই ছন্দপতন, মাথায় আঘাত পেয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে অনেক কষ্টে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিল পরিবার। তাতেও কোনও ফল মেলেনি। তাই বাধ্য হয়েই মুরকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছেন তাঁরা। প্রায় ২৪ বছর ধরে বন্দিদশায় জীবন কাটছে মুরের। 

    সুরাত আলি শেখ ও মুর সেলিম শেখ সম্পর্কে দুই ভাই। বৃদ্ধ মা-ও রয়েছেন বাড়িতে। মুর পরিবারে ছোট ছেলে। বৃদ্ধ মা কোনও রকমে কাজকর্ম করে সন্তানের চিকিৎসা করেছিলেন। তাতেও কোন সুরাহা মেলেনি। টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করা পরিবারের পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ তাঁর কাছে যেতে ভয় পান। এলাকাবাসীদের মারধর করেন। এমনকি শিশুদের দেখলেও তাড়া করে বেড়ান। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচলতি মানুষ সকলেই তাঁর আতঙ্কে থাকে।

    মুরের যখন ২২ বছর বয়স তখনও পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। দাদা সুরাত জানান, আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে গঙ্গায় স্নান করে এসে হঠাৎ দেওয়ালে আঘাত লাগে ভাইয়ের। তারপর থেকেই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করা হলেও কোনও লাভ হয়নি। আর্থিক অনটনের কারণে ভাল ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই বাধ্য হয়েই তাঁকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, পরিবারের লোকেরা তাঁকে বিয়ে দিলেও কিছুদিন পরেই বৌ তাঁকে ছেড়ে চলে যান।

    শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা এভাবেই শিকলে বাধা তাঁর জীবন। অন্যেরা যখন স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেন তখন তার এই অস্বাভাবিকতায় মানবিক নজর নেই কারও। মুরের বন্দিদশা কাটবে কবে জানেন না কেউ।
  • Link to this news (আজকাল)