চন্দ্রকোণার ৩১৮ একর জমির মালিক কে? কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তে ধোঁয়াশা
হিন্দুস্তান টাইমস | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
জমির মালিকানা কার? কলকাতা হাইকোর্ট যাঁকে দেবে তাঁর। এই প্রশ্নের এমনই উত্তর এসেছে আদালতে শুনানি হওয়ার পর। কারণ পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণায় ৩১৮ একর জমি দেওয়া হয়েছিল বেআইনি অর্থলগ্নি প্রয়াগ সংস্থাকে। এই জমিতে গড়ে ওঠার কথা ছিল ফিল্ম সিটি। কিন্তু সেসব হয়নি। বরং সারদা কেলেঙ্কারির পর্দাফাঁসের পর বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা প্রয়াগ–কে নিয়ে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সুতরাং সেই মামলা এখন কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন। কিন্তু তার মধ্যেই ২০২৪ সালে অভিযোগ ওঠে, রাজ্য সরকার ওই জমি শ্যাম স্টিল সংস্থাকে বিক্রি করে দিয়েছে শিল্প গড়ে তোলার জন্য।
এই অভিযোগ সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। কারণ বেআইনি এই অর্থলগ্নি সংস্থার সম্পত্তি নিলামে তুলে দিয়ে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ ওই সব সংস্থায় লগ্নি করে প্রতারিত মানুষদের দেওয়ার কথা। সেটা না করে তার বদলে কী করে রাজ্য সরকার একটি শিল্পসংস্থাকে ওপেন টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করল? এই প্রশ্ন আগেই কলকাতা তুলেছিল হাইকোর্ট। আর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রয়াগ সংস্থাকে নিয়ে শুনানি চলাকালীন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিল, ওই জমির মালিকানা–সহ যাবতীয় বিষয় এখন নির্ভর করছে কলকাতা হাইকোর্টে মামলার পরিণতির উপরই।
এই সিদ্ধান্তের পর আপাতত এই জমির মালিকানা এখন বিশ বাঁও জলে। ফিল্ম সিটিও হল না এবং শিল্পও গড়ে উঠছে না। এখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেমনই দাঁড়াচ্ছে। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওই শ্যাম স্টিল সংস্থার কী চুক্তি হয়েছে সেটা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট চিন্তিত বা ভাবিত নয়। চন্দ্রকোণার ওই জমি–সহ যাবতীয় সম্পত্তি আবার নতুন করে ভ্যালুয়েশন করতে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় সেবি–কে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, এই কাজে নথিপত্র দেওয়া এবং পরিকাঠামোগত যাবতীয় সাহায্য করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সুতরাং চাপ বাড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি ইনভেন্ট্রি এবং ভ্যালুয়েশন বিষয় নিয়ে সেবি রিপোর্ট দেবে। আর সেটি পাওয়ার পর ওই সম্পত্তি যে নিলাম করতে চায় কলকাতা হাইকোর্ট সেটাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। সেক্ষেত্রে ওই নিলামে যদি শ্যাম স্টিল সংস্থা অংশ নিয়ে ন্যায্য দাম দিতে পারে তাহলে তখন তারা ওই সম্পত্তির অধিকার পেতেই পারে। এমনই বক্তব্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের। কিন্তু শ্যাম স্টিল তো একবার অর্থ দিয়ে ওই জমি কিনেছে। আবার কেন কিনবে? এই প্রশ্ন তুলছে শ্যাম স্টিল সংস্থাই। এই সংস্থার অভিযোগ, ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে চন্দ্রকোণার ওই জমি কিনেছে শ্যাম স্টিল। যদিও রাজ্য সরকার এখন সংশ্লিষ্ট জমি ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে এই কথা আদালতে শ্যাম স্টিল জানালে রাজ্য সরকারে ঘাড়ে দায় বর্তাতে পারে। সুতরাং একটা জটিল আবর্তে আটকে রয়েছে ওই জমি।