• ছোলা ভাঙে ছাতুকলে, জোরে জোরে গান চলে
    এই সময় | ১০ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ

    ফেরিওয়ালার চেনা হাঁক নয়। বিচিত্র সুরে কোনও আওয়াজও নয়। সাউন্ড সিস্টেমে বাজছে ‘হিট’ হিন্দি সিনেমার গান। নব্বইয়ের দশকের ‘খলনায়ক’ থেকে হালফিলের ‘জওয়ান’— বাদ যাচ্ছে না কিছুই। সেই গানই তাঁদের প্রচার। বলা ভালো, ইউএসপি।

    সেই গান বাজিয়েই রায়গঞ্জের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন মিন্টু লাল। বাহন মোটরবাইক। আর সেই বাইকেই রাখা থাকছে ছোলা, ছোলা ভাঙানোর মেশিন আর সাউন্ড-বক্স। মিন্টু লাল একা নন, বিহার থেকে আসা তাঁর মতো বেশ কয়েকজন যুবক পাড়ায় পাড়ায় ‘দুয়ারে ছাতু’-র ব্যবসা শুরু করেছেন। বিশ্বাসে ‘পিওর ছাতু’ মিলছে বলে লোকজনও ভিড় করছেন তাঁদের কাছে।

    রবিবার দুপুর তখন সাড়ে ১২টা। শীতের মেজাজে মজেছে শহরের দেহশ্রী মোড়। খরমুজাঘাট রোডে নিজের দোকানে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন হাবলু দে। প্রথম দফার চা শেষ। দ্বিতীয় পর্বের চা অর্ডার করতে যাবেন, ঠিক সেই সময়ে তিনি শুনলেন— ‘ম্যায় হুঁ ডন...।’ কী কেস? দেখলেন, ধীর গতিতে একটি মোটরবাইক যাচ্ছে। গান বাজছে সেখান থেকেই। ব্যাপারটা অভিনব মনে হতেই বাইক চালকের উদ্দেশে হাঁক দিলেন হাবলু।

    বাইক থামতে দেখা গেল, পিছনের সিটে একটা যন্ত্র রাখা আছে। পেট্রল ট্যাঙ্কের উপরে রাখা একটা বস্তা। হ্যান্ডেলে সাদা দু’টি ব্যাগ ঝোলানো। ততক্ষণে দর-দাম শুরু করেছেন হাবলু। ‘অর্ডার’ পেয়ে কাজ শুরু করলেন মিন্টু। ব্যাগ থেকে বেশ কয়েক মুঠো ছোলা বের করলেন। জেনারেটর স্টার্ট করার কায়দায় ফিতে টেনে মেশিন স্টার্ট দিয়ে সেই ছোলা রাখলেন যন্ত্রের নির্দিষ্ট পকেটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেশিনের অন্য প্রান্ত দিয়ে ছাতু বেরিয়ে আসতে শুরু করল। আর একটি ব্যাগ থেকে ওজনযন্ত্র বের করে ছাতু ওজন করে তুলে দিলেন হাবলুর হাতে।

    হাবলু জানিয়েছেন, এতদিন তিনি দোকান থেকে প্যাকেটবন্দি ছাতু কিনতেন। ছোলা কিনে ভাঙিয়ে আনার মতো সময়ও তাঁর নেই। তিনি বলছেন, ‘এ ভাবে ছাতু বিক্রির কথা শুনেছিলাম। কিন্তু এই প্রথম বিক্রেতাকে নাগালে পেলাম। আমার সামনেই ছোলা ভাঙিয়ে ছাতু তৈরি করে দিলো। একদম অর্গ্যানিক। কোনও কেমিক্যাল মেশানোর ব্যাপার নেই। আবার বাজারের চেয়ে দামও কম। বাজারে এক কেজি ছোলার ছাতুর প্যাকেট কিনতে হয় ১৪০ টাকায়। দুয়ারে ছাতু পেয়ে গেলাম ১৩০ টাকা কেজিতে। আমি ওই বিক্রেতার মোবাইল নম্বর নিয়ে রেখেছি। এরপর থেকে প্রয়োজন হলেই ডেকে নেব।’

    মিন্টু লাল নামে ওই ভ্রাম্যমাণ ছাতুর দোকানের মালিক বলছেন, ‘আমার বাড়ি পাটনায়। এখন লোকজনের অর্গ্যানিক খাবারের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। সেটাকে কাজে লাগিয়েই এই ব্যবসা শুরু করেছি। আমরা ছ’জন পাটনা থেকে রায়গঞ্জ শহরে এসে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছি। বাইক নিয়ে এসেছি ট্রেনে। স্থানীয় বাজার থেকে ছোলা কিনে ক্রেতাদের সামনেই ভাঙিয়ে ছাতু বিক্রি করছি। ক্রেতারাও বাড়ির দোরে তা পেয়ে যাচ্ছেন। ছোলা ভাঙিয়ে ছাতু তৈরির সময়ে ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্লু-টুথ স্পিকারে গান বাজানোরও ব্যবস্থা রেখেছি। আবার ওই গান শুনেই লোকজন এখন বুঝতে পারেন, আমরা চলে এসেছি।’

  • Link to this news (এই সময়)