• 'আমাকে যদি দেখিয়ে দেওয়া হত আমি দলবিরোধী কাজ করেছি, ক্ষমা চেয়ে নিতাম'!
    ২৪ ঘন্টা | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একাধিক পদ থেকে অপসারণের এবার তৃণমূল থেকে বহিষ্কার! শান্তনু সেন বললেন, 'আমার এখনও পর্যন্ত বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে, আমি দলবিরোধী কাজ করলাম কী! আমার মাননীয় নেতৃত্ব যদি আমাকে একটু বলে দিতেন, আমার অন্তত ভালো লাগত'।

    একসময়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন শান্তনু। তিনি বলেন, 'বারবার দলে পাল্টে, নির্বাচনের আগে অন্য দলে গিয়ে আবার ফিরে এসে, পাঁচিলের উপরে পা তুলে.. এখনও এই ধরনের কাজ তো করিনি। দলের কঠিন সময়ে, যখন সংবাদমাধ্যমে অনেকে যেতে চাইত না, দলের জার্সি পরে প্লেয়ার হিসেবে দলকে গার্ড করার জন্য কাজ করেছি। আমাকে যদি দেখিয়ে দেওয়া হত, বা প্রমাণ   করে দেওয়া হত যে, আমি দলবিরোধী কাজ করেছি। আমি তাহলে ক্ষমাও চেয়ে নিতাম'।

    সদ্য বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার আরও বক্তব্য, 'সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে, বেআইনিভাবে যখন ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্য়াল কাউন্সিল থেকে আমাকে সরানো হল, তখনও আমার কাছে কমিউনিকেশন আসার অনেক আগে মিডিয়ার কাছে কমিউনিকেশন চলে এল। আজকে সাসপেন্ড করার ঘটনাও সংবাদমাধ্যমে জানতে পারছি। গত দু'দিন আগে কোনও একটি চ্যানেলের বন্ধু আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছিল, এই ধরণের একটা ঘটনা ঘটছে। আমরা কাছে কমিউনিকেশন আসার আগেই মিডিয়াতে কমিউনিকেশন অনেক আগে চলে গিয়েছে'।

    শোকজ করা হয়েছিল? শান্তনুর জবাব, 'কোনওভাবে কখনই নয়। আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছি। প্রথম দিন থেকে কংগ্রেসের ঝান্ডা ধরে রাজনীতি করতে করতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে প্রথমদিন থেকে থেকেছি। আমি যে জায়গা থেকে রাজনীতি করেছি, সেই জায়গাটা সিপিএমের দুর্গ ছিল। তৃণমূলের ঝান্ডা ধরার লোক পাওয়া যেত না, সেই জায়গায় থেকে লড়াই করে, প্রথমদিন থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক হিসেবে কাজ করে গিয়েছি'।

    আরজি কাণ্ড তখন উত্তাল গোটা রাজ্য।  একের পর এক মন্তব্যে দলের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছিলেন শান্তনু। সেকারণেই কি  বহিষ্কার? তৃণমূলের তরফে অবশ্য নির্দিষ্ট করে কোনও কারণ জানানো হয়নি। তবে আরজি কর কাণ্ডের পরই প্রথমে দলের মুখপাত্র, তারপর রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সরকার মনোনীত সদস্যদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এই চিকিত্‍সক নেতাকে। রাজ্য়সভার প্রাক্তন সাংসদের বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ছিল বলে খবর।

    শান্তনু বলেন, 'আমি শুনছি, কেউ কেউ আমায় বলছে, আরজি করের ঘটনায় আমার কাজ নাকি দলবিরোধী। আমি আরজি করের প্রাক্তন ছাত্র, আমি স্ত্রী আরজি করে প্রাক্তন ছাত্র, আমার কন্যা এখন আরজি করে পাঠরতা। আরজি করে বিগত দেড়-দু'বছরে আগে, রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে যে যে জিনিস, আমি সামনে দেখেছিলাম। এই স্বনামধন্য সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে আরজি করে যে দুর্নীতি চক্র বাসা বেঁধেছিল। তখন কোনও মিডিয়া জানত না। আমি খুব সুনিপুণভাবে গোপনীয়তা বজায় রেখে সংশ্লিষ্ট জায়গায় কাগজগুলি জমা দিয়ে এসেছিলাম'।

    শান্তনুর দাবি, 'আমি দলের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও রোগী কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও আমার উপর, আমার পরিবারের উপর, আমার একমাত্র কন্যা, যে ওখানে পাঠরতা, তার উপর যে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার হয়েছে। তাঁকে সামাজিকভাবে বয়কট করা থেকে শুরু করে, ফেল করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে শুরু করে, কলেজে টোন করা থেকে শুরু করে। রাত পৌনে বারোটায় ফোন করে এই আশিষ পাণ্ডে যে আজকে জেল খাটছে আমার মেয়ে থ্রেট করেছে। আমার মেয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার জন্য এই সন্দীপ ঘোষ খাতা চেয়ে পাঠিয়েছে। আমি দলের স্বার্থে একটা কথা কোনওদিন কোনওজায়গায় বলিনি। আমি নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় জানিয়েছিলাম। দলের অভ্যন্তরে জানিয়েছি। শুনেছি যে বা যারা স্বাস্থ্য পরিষেবায় দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাঁদেরকেও জানানোর চেষ্টা করেছি। দলের বাইরে কোনওকথা বলিনি'। 

    আরজি কর কাণ্ডের পর যে কলেজের তত্‍কালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরোধিতা করেছিলেন, সেকথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন শান্তনু। তিনি বলেন,'অনেকে হয়তো বোঝানোর চেষ্টা করছে, আরজি করের ঘটনা বা স্বতঃস্ফর্ত আন্দোলন নাকি আমি মদত দিয়েছি। আপনাদের জানিয়ে দিই, এই আন্দোলনে অনেক জায়গা যায়নি বা আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি, আমার গায়ে তৃণমূলে জামা আছে বলে। আরজি করে যেখানে শহিদ মঞ্চ করা হয়েছিব, সেখান দিয়ে আমি যখন ঢুকতাম এক্স স্টুডেন্সের সেক্রেটারি ছিলাম। আমি তৃণমূল করি বলে গো-ব্যাক স্লোগান পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। একবার, বারবার। অথচ তার পরেও বলা হচ্ছে, আমি নাকি আন্দোলনকে মদত দিয়েছি! তারপর থেকে যেটুকু যেখানে কাজ করেছি, দলের জন্য কাজ করেছি। আমার সরকারের জন্য ভালোর জন্য কাজ করেছি'।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)