• ছাত্র সেজে মেসে ছিল বাবলা খুনে ধৃত দুই যুবক
    এই সময় | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক দে, মালদা

    শহরের অলিগলিতে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে বিজ্ঞাপনগুলো। নিতান্তই আটপৌরে। তবুও যাঁদের প্রয়োজন, তাঁদের নজরে পড়েই যায়। কোথাও তিনতলা বাড়ির ছাদে ঢাউস করে লেখা— ‘মেস’। কোথাও চোখে পড়ে— ‘এখানে মেয়েদের পিজি রাখা হয়।’ কোথাও আবার নজর চলে যায়— ‘এখানে ঘর ভাড়া দেওয়া হয়।’ আর সেই কবে থেকে চলে আসা ‘টু লেট’ তো আছেই।

    ইংরেজবাজার শহরেরও এমন বহু মেসবাড়ি রয়েছে। রয়েছে সস্তায় থাকা-খাওয়ার চলনসই ব্যবস্থা। মেসকে কেন্দ্র করে বাড়ির মালিকদেরও একটা অতিরিক্ত উপার্জনের পথ খুলে যায়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহু পড়ুয়া মেস ভাড়া নিয়ে থাকেন। কর্মসূত্রেও অনেকে মেসে থাকেন। এই পর্যন্ত সব ঠিক আছে। কিন্তু বিপত্তিটা শুরু হয় অন্যত্র। অভিযোগ, মেসে কারা আসছে, কারা থাকছে সেই তথ্যই থাকে না পুলিশ-প্রশাসনের কাছে।

    গত কয়েকদিন থেকে তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় উত্তাল মালদা। তার মধ্যেই জেলা পুলিশের হাতে এসেছে একটি বিস্ফোরক তথ্য। গাবগাছি এলাকায় একটি মেসবাড়িতে দু’দিন ছাত্র সেজে রাত কাটিয়েছিল বাবলা খুনে ধৃত বিহারের দুই পেশাদার খুনি। ধৃত টিঙ্কু ঘোষ ওই দু’জনকে পরিচিত একটি মেসবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। এই ঘটনার পর থেকে মেসবাড়ির নিরাপত্তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    বাবলা সরকার খুনে এখনও পর্যন্ত সাত জন ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের বয়স ১৯ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। বিহারের ওই দু’জনকে মেসে রাখে টিঙ্কু ঘোষ। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে তারা আশ্রয় নেয় মহানন্দাপল্লি এলাকার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। ইংরেজবাজারের পুরপ্রধান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘মেস বা ভাড়াবাড়ির নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। তবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে কোনও বাড়ি ব্যবহার করা হলে তা অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

    ইংরেজবাজারের গাবগাছি এলাকার এক মেসবাড়ির মালিক বাবলু শেখ বলেন, ‘যারা মেসে থাকেন তাঁদের বেশিরভাগই ছাত্রছাত্রী। তাদের পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি জমা নিয়েই থাকতে দিই। কিন্তু সেই তথ্য যে পুলিশ-প্রশাসনকেও জানাতে হয়, এটা আমাদের জানা ছিল না। তারা চাইলে অবশ্যই বিশদে সব তথ্য জানাব।’

    মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘ব্যবসার কাজে অনেকেই বাইরে থেকে আসেন। তবে তাঁদের প্রথম পছন্দ হোটেল। কিন্তু মেস বা ভাড়া বাড়িতে কারা আসছে, কারা থাকছে সেটা অবশ্যই পুলিশের তদারকি করে দেখা জরুরি।’ মালদার এই ঘটনার পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হোটেল, মেস ও ভাড়াবাড়ির উপরে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে যাঁরা থাকেন তাঁদের সবার তথ্যও চেয়ে পাঠানো হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)