নদী পার করাবে ‘ঢেউ’। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা। ‘ঢেউ’ হলো রাজ্য পর্যটন দপ্তরের ই-ভেসেল, ব্যাটারি–চালিত জলযান। সারা দেশে এই উদ্যোগ প্রথম। পরিবেশকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি, লঞ্চ-ভেসেল কিংবা ভুটভুটিতে জীবাশ্ম–জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করা হোক। কারণ, এর ফলে নদীর জল ভয়ঙ্কর দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে নদীর জীববৈচিত্র।
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ডিজ়েলের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে দূষণ কমবে, তবে ব্যাটারি–চালিত ভেসেলেও দূষণকে বাগে আনা যাবে না। কারণ, ব্যাটারি চার্জিংয়ে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে, তার উৎসও সেই জীবাশ্ম–জ্বালানি!
পরিবেশ রক্ষায় ইলেকট্রিক ভেহিকল ব্যবহারেই ইদানীং জোর দেওয়া হচ্ছে। এক দিক দিয়ে তা পরিবেশের পক্ষে ভালো। কারণ, এতে কার্বন নির্গমন হয় না বললেই চলে। তবে পরিবেশকর্মীদের দাবি, ব্যাটারি চার্জিংয়ে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তা তৈরি হচ্ছে কয়লা পুড়িয়েই। তাতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
কলকাতার বিভিন্ন ঘাটগুলিতে যে লঞ্চ চলে, তাতে সরাসরিই জীবাশ্ম–জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। ডিজেল পোড়ায় এক দিকে কার্বন নির্গমন হচ্ছে। অন্য দিকে, ডিজেল মিশে ভয়ঙ্কর দূষিত হচ্ছে নদীর জল। এই কারণেই রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবরে রোয়িং ক্লাবের যে নজরদার এবং রেসকিউ বোটগুলি আগে ডিজেল–চালিত ছিল, মামলা হওয়ার পরে আদালত তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বর্তমানে দাঁড় টানা নৌকায় চলে নজরদারি এবং উদ্ধারকাজ।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘ডিজেল–চালিত জলযান বন্ধের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই জানিয়ে আসছি। গঙ্গার জল এমনিতেই দূষিত। তার পরে খনিজ তেল মিশে সেই জলকে আরও দূষিত করছে। ব্যাটারি–চালিত বোটও পরিবেশের পক্ষে লাভজনক নয়। বরং সোলার প্যানেলের সাহায্যে ব্যাটারি রিচার্জিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে উপকার হবে।’
কলকাতার পাশাপাশি সুন্দরবন–সহ দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং আরও বেশ কয়েকটি জেলায় যাত্রী পরবিহণের জন্যে লঞ্চ এবং নৌকা ডিজেলেই চালানো হয়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমীক্ষা করে দেখেছে, যে সব নদীতে এই ধরনের জলযান চলে, সেখানে দূষণের মাত্রাও খুব বেশি।