• নারায়ণগড় রাজা হৃষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতনে প্লাটিনাম জয়ন্তীতে নানা অনুষ্ঠান
    বর্তমান | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বেলদা: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম নারায়ণগড় রাজা হৃষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৩৩ সালে ইংরেজ আমলে রাজা ঋষিকেশ লাহার বদান্যতায় নারায়ণগড় এলাকায় গড়ে উঠেছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে ১৯৪৯ সালে স্বাধীনতার পরপরই লাহা পরিবারের জায়গায় বহুরূপা দিঘির পশ্চিম পাড়ে এই বিদ্যালয় গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৫০ সালে তা সরকারিভাবে অনুমোদন পায়। ১৯৬১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদিত হয়। আর সেই থেকেই এই বিদ্যালয়ের নাম নারায়ণগড় রাজা হৃষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এই বিদ্যালয় ৭৫ বছর পার করল। প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন উৎসব অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেই উপলক্ষ্যে স্কুলে সাজ সাজ রব।


    এই ৭৫ বছরে বিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। এই বিদ্যালয়ে একসময় শিক্ষকতা করেছিলেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বিদ্যালয়ের একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এসেছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিনোবা ভাবে। বর্তমানে এই উচ্চ বিদ্যালয়ে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। ৩০জন শিক্ষক শিক্ষিকা, ছ’জন শিক্ষাকর্মী ও একজন গ্রন্থাগারিক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক জিম, খেলার মাঠ, লোধা-শবর পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের জন্য বিশেষ আশ্রমিক হস্টেল। রয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। বিদ্যালয় ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যাবে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত সহ নানা মনীষীদের মূর্তি বসানো রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ বিভিন্ন মনীষীদের নামে নামাঙ্কিত। প্রধান শিক্ষকের কক্ষ যেমন বিদ্যাসাগরের নামে, তেমনই ছাত্রীদের কমনরুম ভগিনী নিবেদিতার নামে। শিক্ষকদের স্টাফরুম জাতীয় শিক্ষক সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের নামে। বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি বড় অডিটোরিয়াম। আগামী ১৬ জানুয়ারি প্লাটিনাম জয়ন্তী উৎসবের সূচনা হবে। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। থাকছেন শিক্ষাবিদ মীরাতুন নায়ার। অন্যান্য দিনগুলিতেও থাকছেন রাজ্যের মন্ত্রী মানসরঞ্জন ভুঁইয়া, নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্ট, জেলাশাসক, পুলিস সুপার সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা।


    স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুতোষ বারিক ও পরিচালন সমিতির সভাপতি চপলকান্তি দে বলেন, প্লাটিনাম জয়ন্তী বর্ষে চারদিন ধরে থাকছে নানা অনুষ্ঠান। থাকছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা শিবির থেকে শুরু করে খাদ্যমেলা। থাকছে টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাকাশ দেখানোর ব্যবস্থা। আশা করছি উৎসবের এই ক’টা দিন সকলে আনন্দে মেতে থাকবেন। 


    উৎসব কমিটির সম্পাদক প্রসূন পাত্র ও সভাপতি দুলালকুমার টুং বলেন, ঐতিহ্যবাহী আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের অতীত গরিমা রয়েছে। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা নানা জায়গায় গৌরবের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আজ তারা দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় উচ্চপদে আসীন। উৎসব কমিটির দুই কার্যকরী সভাপতি তাপস সিনহা ও শেখ আলেম হোসেন বলেন, ১৯ তারিখে আয়োজিত প্রাক্তনী পুনর্মিলন উৎসবে আশা রাখছি অধিকাংশ প্রাক্তনী উপস্থিত হয়ে বর্তমান পড়ুয়াদের সঙ্গে হাতে হাত মেলাবেন। আর তার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে। প্রাক্তনীদের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছনোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হয়তো সকলের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হবে না। সকল প্রাক্তনীকে অনুরোধ করছি উৎসবের দিনগুলিতে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)