• নিষিদ্ধপল্লির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ, যৌনকর্মীদের মারধর কুলটিতে
    বর্তমান | ১১ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: নিষিদ্ধপল্লির মধুভাণ্ডের দখল ঘিরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল কুলটিতে। বৃহস্পতিবার রাতে কুলটি থানার লছিপুরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মারপিট হয়। নিষিদ্ধপল্লির ভেতরে থাকা দোকান সহ একাধিক আসবাবপত্র তছনছ  করে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারধর খেতে হয় যৌনকর্মীদেরও। পরে এসিপি পদ মর্যাদার অফিসার সহ বিশাল পুলিস বাহিনী এসে কোনওকরমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সূত্রের খবর, এই নিষিদ্ধপল্লিতে প্রতি রাতে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার চলে। সেই কারবারে থাবা বসাতে এলাকার দু’টি গোষ্ঠী মরিয়া। ফলে, মাঝেমধ্যে তাদের মধ্যে ঝুটঝামেলা লেগেই থাকে। এদিন রাতে এমনই গোলমাল মুহূর্তের মধ্যে সঙ্ঘর্ষের রূপ নেয়। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে কোন সময়ে বড় অঘটন ঘটার সম্ভবনা ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। নিষিদ্ধপল্লির নিয়ন্ত্রকদের একাংশের অভিযোগ, স্থানীয় এক বিজেপি নেতার নির্দেশেই বহিরাগত লোকজন নিষিদ্ধপল্লিতে ঢুকে হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই বিজেপি নেতা। 


    ডিসি সন্দীপ কাররা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মারপিটে, অশান্তির ঘটনা ঘটে। পুলিস পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি কাঞ্চন রায় বলেন, শুনেছি ওই ওয়ার্ডে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রাম বাউরির নির্দেশেই এই হামলা হয়েছে। আমরা পুলিসকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।  


    যৌনপল্লিতে থাকা একটি ক্লাবের কর্তা গৌতম বিশ্বাস বলেন, যৌনপল্লিতে বহিরাগত দালালদের অত্যাচার বাড়ছে। বিভিন্ন সমাজের নাম করে এসে হুজ্জুতি করছে তারা। এদিন রাতের গোলমালেও বহিরাগতরা যুক্ত। তারা যৌনপল্লির মহিলাদেরও নির্বিচারে মারধর করেছে। যৌনকর্মীদের কল্যাণে কাজ করা দুর্বার সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজেই দেখা যাচ্ছে, কীভাবে যৌনকর্মীদের লাঠি নিয়ে মারধর করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। 


    বিজেপি নেতা রাম বাউরি বলেন, বিজেপি করি বলে আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। যৌনপল্লিতে লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার বোর্ড চলছে। নানা অনৈতিক কাজ হচ্ছে। স্থানীয়রা ওখানে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে। তাদের এখন যৌনপল্লিতে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বুধবার আমাদের স্থানীয় দু’জন ছেলেকে মারধর করেছে। মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। 


    কুলটি থানার লছিপুর। একটা সময়ে অত্যন্ত দরিদ্র যৌনকর্মীরা দেহব্যবসা করে রুজিরুটি চালাতেন। সেই সময়ে কাস্টমারও ছিল নিম্নবিত্ত পরিবারের। ঝুপড়ি ঘরের যৌনপল্লিতে টাকার খেলা হতো কম। গত এক দশকের মধ্যে  চেহারাটা আমূল পাল্টে গিয়েছে। যৌনপল্লিতে বিশাল বিশাল অট্টালিকা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। রাত-বিনোদনের সব রসদও মজুত সেখানে। অর্থবান কাস্টমারদের অহরহ আনাগোনা। পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দামি দামি গাড়ি। এখন যৌনপল্লিতে এক একজন কাস্টমারের বিল হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। আর এই কাঁচা টাকা ধরতে শুরু হয়েছে এক অশুভ প্রতিযোগিতা। প্রতি নিয়ত অশান্তি লেগেই থাকে লছিপুরে। কখনও ভিন রা঩঩জ্যের নাবালিকা উদ্ধার হচ্ছে। কখনও অবৈধ পার্কিং চালানোর অভিযোগ পাশাপাশি, এখানে বসে জুয়ার বোর্ডও। তাই এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া অনেকেই। ক্ষোভ বাড়ছিল একাংশের। সেই ক্ষোভের ঘির ঘি ঢালে বুধবারের সামান্য মারপিট। অভিযোগ, বাউরি সম্প্রদায়ের দুই ছেলেকে মারধর করা হয়। সেদিন রাতেই বিপুল জমায়েত হয়ে পাল্টা মারের ছক তৈরি হয়েছিল। পুলিস কোনও রকমে তা ঠেকায়। তারপর বৃহস্পতিবার লাঠি, রড নিয়ে হয় হামলা। রাজনৈতিক সূত্রে খবর, কাঁচা টাকার দখল নিয়ে এখানে শাসক দলের নেতাদের মধ্যেও তীব্র দ্বন্দ্ব চলে। ঝামেলায়ও জড়িয়ে পড়েন দু’ পক্ষ। এই সুযোগটাকেও ইদানীং  কাজে লাগাচ্ছে বহিরাগতরা।
  • Link to this news (বর্তমান)